আমড়ার উপকারিতা,আমড়ার পুষ্টিগুণ ও গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা জানতে পড়ুন

আম খাওয়ার ১০টি উপকারিতাপ্রিয় পাঠকগণ আজকের আর্টিকেলে আপনাদের স্বাগতম। আপনি কি আমড়ার উপকারিতা, আমড়ার পুষ্টিগুণ ও গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করেছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। ছোট বড় প্রায় সকলেই আমরা আমড়া খেতে পছন্দ করি। মৌসুমী ফল হিসেবে আমড়া আমাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
আমড়ার উপকারিতা
তাই আমরা বাজারে কোন মৌসুমী ফল কিনতে গেলে আমাদের চোখ সবুজ রঙের এই আমড়া জিভে জল আনতে পারে। অন্যান্য মৌসুমী ফলের মধ্যে যেমন পুষ্টিগুণ রয়েছে তেমনি আমড়াতেও প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে। এই আমড়া আমাদের শরীরে বিভিন্নভাবে উপকার করে থাকে। চলুন তাহলে আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমড়া উপকারিতা,আমড়ার পুষ্টিগুণ ও গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানা যাক।
সূচিপত্র: আমড়ার উপকারিতা,আমড়ার পুষ্টিগুণ ও গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা জানতে পড়ুন।

আমড়ার পুষ্টিগুণ

প্রথমেই আমরা জানবো আমড়ার মধ্যে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের শরীরে বিভিন্নভাবে উপকার করে থাকে। যেহেতু আমড়া একটি টক ফল তাই এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। তাছাড়া আমড়াতে আরও রয়েছে শর্করা, প্রোটিন, চর্বি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি,ভিটামিন সি, খনিজ পদার্থ ও খাদ্য শক্তি।
প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়াতে আপনি ১৫ গ্রাম শর্করা, ১.১ গ্রাম প্রোটিন, ০.২ গ্রাম চর্বি, ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩.৯ মিলিগ্রাম আয়রন, ৮০০ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন, ১০.২৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ০.৬ মিলিগ্রাম খনিজ পদার্থ ও ৬৬ কিলো ক্যালরি খাদ্য শক্তি পেয়ে যাবেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে একটি আমড়া খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের কত ধরনের ভিটামিন ও পুষ্টির অভাব পূরণ হতে পারে। আশা করি আমড়ার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন।

আমড়ার উপকারিতা

এ পর্যায়ে আমরা আমড়ার উপকারিতা সম্পর্কে। আমড়া সাধারণত গ্রীষ্মকালীন ফল। গ্রীষ্মকালে রাস্তায় ফল বিক্রেতাদের হাতে বা ভ্যানে ফুলের মত করে কেটে সাজিয়ে রাখা আমড়া দেখেছি। আর সেই আমড়া দেখে আমাদের জিভে জল আসেনি এমন মানুষ খুব কম খুঁজে পাওয়া যাবে। গরমের সময় আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারের ঘাটতি পূরণ করার পাশাপাশি ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করতে আমড়া বিশেষভাবে উপকার করে থাকে। এ সকল উপকারের পাশাপাশি আমড়া আমাদের শরীরে কি কি আরো উপকার করে থাকে চলুন তা জানা যাক। আমড়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে নীচে লক্ষ্য করুন।

  • ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করে: আমরা সকলেই জানি টক জাতীয় ফলে প্রচুর পরিমাণ এর ভিটামিন সি রয়েছে। তেমনি আমড়া একটি টক জাতীয় ফল যাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। প্রতিদিন একটি করে আমড়া খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে ভিটামিনের চাহিদা প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ পূরণ হয়। তাছাড়া আমড়াতে প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল থেকে রক্ষা করে।
  • সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা করে: বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণ করার ফলে আমাদের অনেক সময় সর্দি এবং কাশি হয়ে থাকে। এ সকল সর্দি কাশি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শরীরে প্রচুর পরিমাণ এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকা অত্যন্ত জরুরী। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনি প্রাকৃতিকভাবে পেতে পারেন যদি দৈনিক একটি করে আমড়া খান।
  • বদহজমে সমস্যা থেকে রক্ষা করে: আমড়াতে প্রচুর পরিমাণ এর ফাইবার থাকায় এটি আমাদের পেটের বদহজমের সমস্যা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। আমড়াতে থাকা ফাইবার পাকস্থলীর কার্যক্ষমতা কে স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে সাহায্য করে ফলে আমরা সহজেই বদহজম বা পেটে সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে পারি।
  • ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা: ভাইরাস আক্রমণের কারণে আমাদের শরীরে ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের জীবাণু তৈরি হতে থাকে। এই ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শরীরে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকা অত্যন্ত জরুরী। তাই আপনি যদি দৈনিক একটি করে আমড়া খেতে পারেন তাহলে ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ থেকে রক্ষা পাবেন।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে: আমড়াতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি আমাদের পাকস্থলীর বদ হজম,পেট ফাঁপা কমাতে সাহায্য করে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগ হতে বাধা দেয়। আমাদের মধ্যে বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগের সমস্যা অত্যাধিক দেখা যায়। তাই তাদেরকে নিয়মিত একটি করে আমড়া খাওয়ানোর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
  • ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করেন: আমরা অনেকেই হয়তো বিশ্বাস করব না যে আমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। আমড়াতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি আমাদের হারে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। তাছাড়া শিশুদের দৈহিক গঠনেও ক্যালসিয়াম খুব উপকারী।
  • মুখে রুচি বৃদ্ধি করে: আমড়া এক ধরনের টক জাতীয় ফল হওয়া এবং এতে এমন কিছু ভেষজ গুণ রয়েছে যা আমাদের শ্বাসনালীর কফ নাশক হিসেবে কাজ করে। যার ফলে আমাদের মুখের রুচি বৃদ্ধি পায়।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে: আমড়া টক জাতীয় ফল হাওয়ায় এটিতে এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের শরীরের চর্বিকে কমাতে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি অল্প সময়ের মধ্যে ওজন কমাতে চান তাহলে নিয়মিত আমড়া খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে কিছুদিনের মধ্যেই আপনার ওজন কমে যাবে।
  • রক্তশূন্যতা দূর করে: আমড়াতে এক ধরনের আয়রন রয়েছে যা আমাদের রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। আর আমরা জানি যে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক থাকলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত তৈরি হয়। তাই যাদের রক্তশূন্যতা রয়েছে তারা নিয়মিত আমড়া খাওয়ার চেষ্টা করুন এতে করে রক্তস্বল্পতা কমে যাবে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: আমড়াতে এক ধরনের কোলেস্টেরল রয়েছে যা আমাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক করে এবং হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে আমড়া রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক করে ফলের হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
  • ত্বক সুন্দর রাখে: আমড়া খাওয়ার ফলে আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কারণ আমড়াতে প্রচুর পরিমাণ এর ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি রয়েছে যা আমাদের ত্বকের ব্রণ কমাতে সাহায্য করে পাশাপাশি ত্বক উজ্জ্বল রাখে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো পড়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি আমড়ার উপকারিতা সম্পর্কে। আমড়াতে এত পরিমান এর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা থাকায় আমাদের উচিত নিয়মিত অল্প হলেও আমড়া খাওয়ার অভ্যাস করা। বাচ্চা থেকে বয়স সকল বয়সের মানুষের জন্য আমরা বিশেষভাবে উপকার করে থাকে।

গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় একজন মহিলাকে বিশেষ সতর্কতার সাথে থাকতে হয়। তেমনি অনেক খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হয়। কারণ গর্ভাবস্থার সময় ভুল খাবার গ্রহণ করার ফলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। গর্ভাবস্থার সময় যেমন ফল খাওয়া অত্যন্ত জরুরি তেমনি কিছু ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়।
যার কারনে অনেক গর্ভবতী মহিলার মনে প্রশ্ন জাগে যে গর্ভাবস্থার সময় আমড়া খাওয়া যাবে কিনা। এই প্রশ্নের উত্তরে বলব অবশ্যই গর্ভাবস্থার সময় আমড়া খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। তবে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাই আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সাথে আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।


  • গর্ভাবস্থার সময় একজন মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়ে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমড়া হতে পারে একটি বিশেষ খাবার। তাই কোষ্ঠকাঠিনের সমস্যা থেকে রোখা পেতে গর্ভাবস্থার সময় অল্প পরিমাণের আমড়া খাওয়া উপকারী।
  • গর্ভাবস্থার সময় রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এই রক্তশূন্যতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমড়া বিশেষভাবে উপকার করে থাকে।
  • আমড়াতে প্রচুর পরিমাণ এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি গর্ভাবস্থায় সময় খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। কারণ এন্টিঅক্সিডেন্ট যথেষ্ট পরিমাণে শরীরে তৈরি হওয়ার ফলে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • আমড়া রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাই একজন গর্ভবতী মহিলাকে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে আমড়া খেতে হবে।
  • গর্ভাবস্থায় সময় গর্ভবতী মহিলা অরুচি হয়ে থাকে। এই অরুচি সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে আমড়া খাওয়া উত্তম। আমড়া খাওয়ার ফলে রুচি বৃদ্ধি পায় পাশাপাশি খুদা লাগে।
  • বদহজমে সমস্যা যেন একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য নিত্যদিনের সমস্যা। তাই বদহজমের সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত একটি হলেও আমড়া খাওয়া উপকারী।
  • গর্ভবতী মহিলা ও তার গর্ভের সন্তানের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে হিমোগ্লোবিন না থাকলে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করার জন্য আমড়া খেতে হবে।
  • আমড়াতে এক ধরনের উপাদান রয়েছে যার রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে বা রক্ত জমাট বাধার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যা একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য অত্যন্ত উপকারী।
উপরোক্ত বিষয়গুলো পড়ার মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি যারা গর্ভবতী মহিলা রয়েছে তারা সঠিক নিয়মে সঠিক খাবার খাবেন এবং নিজের স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ খেয়াল রাখবেন।

পরিশেষে কথা/আমড়ার উপকারিতা,আমড়ার পুষ্টিগুণ ও গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা জানতে পড়ুন

ফল আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তেমনি মৌসুমী ফলের মধ্যে আমড়া বিশেষভাবে জনপ্রিয়। আমড়াতে কোন প্রকার পুষ্টিগুণ নেই এটা আমাদের মধ্যে অনেকেরই ধারণা। কিন্তু আমড়াতে এত পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমরা কখনো চিন্তাও করিনি। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন আমড়ার পুষ্টিগুণ, আমড়ার উপকারিতা ও গর্ভাবস্থায় আমড়া খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং কমেন্টের মাধ্যমে মতামত প্রকাশ করুন। এমন আরো উপকারী তথ্য জানতে www.twestinfo.com পেজে চোখ রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টুইস্ট ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্টের উত্তর দেয়া হয়।

comment url