ভিটামিন এ জাতীয় খাবার - ভিটামিন এ এর কাজ ও অভাবজনিত রোগ সম্পর্কে জানুন
মধু মুখে দিলে কি হয়
প্রিয় পাঠক, আপনি কি ভিটামিন এ এর কাজ কি, ভিটামিন এ জাতীয় খাবার ও ভিটামিন এ
এর অভাবজনিত রোগ সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করেছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার
জন্য। এই আর্টিকেলে আপনি উপরোক্ত সকল বিষয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেয়ে যাবেন।
সুন্দর জীবন যাপন করার জন্য আমাদের কে স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হতে হয়।
সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবন যাপন করতে আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার খেতে
হয়। এ সকল পুষ্টিকর খাবার গুলোর মধ্যে ভিটামিন এ অন্যতম। তাই অনেকে ভিটামিন এ
জাতীয় খাবার,ভিটামিন এ এর কাজ ও ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগ সম্পর্কে জানতে গুগলে
সার্চ করে থাকে। আশা করি অজানা তথ্যগুলো জানতে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি
পড়বেন।
সূচিপত্র: ভিটামিন এ জাতীয় খাবার - ভিটামিন এ এর কাজ ও অভাবজনিত রোগ
ভিটামিন এ এর কাজ কি
ভিটামিন এ খাওয়ার পূর্বে আমাদেরকে জানতে হবে ভিটামিন এ এর কাজ কি। স্বাস্থ্য ঠিক
রাখার জন্য আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ এর ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সহ নানান
ধরনের পুষ্টির ভরপুর হতে হয়। এ সকল উপাদান গুলোর মধ্যে ভিটামিন এ হল অন্যতম।
ভিটামিন এ আমাদের শরীরের নানান ধরনের কাজ করে থাকে। শরীরের ভিটামিন এ এর ঘাটতি
কমাতে এবং এর অভাবজনিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই আমাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণের
ভিটামিন এ যুক্ত খাবার খেতে হবে। চলুন তাহলে জানা যাক ভিটামিন এ এর কাজ কি।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: ভিটামিন এ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আমরা জানি রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণ এর অ্যান্টিবডি থাকতে হয়। ভিটামিন এ এ এন্টি বডি তৈরি করতে সাহায্য করে ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- ত্বক সুন্দর করে: ভিটামিন এ আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ভিটামিন এ যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের ত্বক সুন্দর হয়। ত্বকের নানান ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা করে পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে: ভিটামিন এ আমাদের চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ভিটামিন এতে থাকা নানান ধরনের অ্যান্টিবডি আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে। তাই যাদের চোখে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ভিটামিন এ যুক্ত খাবার খেতে পারেন।
- অস্থির গঠনে সাহায্য করে: ভিটামিন এ আমাদের শরীরের অস্থি গঠন করতে সাহায্য করে। তাই একজন গর্ভবতী মহিলা যদি ভিটামিন এ যুক্ত খাবার খায় তাহলে তার গর্ভের সন্তানের অস্থির সুগঠিত হবে পাশাপাশি গর্ভবতী মহিলার শরীর ভালো রাখবে।
- প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: ভিটামিন এ প্রজনন ক্ষমতার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই যাদের প্রজনন স্বাস্থ্য ভালো নয় তারা নিয়মিত ভিটামিন এ যুক্ত খাবার খেতে পারেন। এতে করে প্রজনন স্বাস্থ্য কিছুদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যাবে।
- দাঁত মজবুত করে: ভিটামিনের অভাবে আমাদের দাঁত ক্ষয় হতে শুরু করে পাশাপাশি দাঁত দুর্বল হয়ে যায়। বিশেষ করে এই সমস্যাটি বাচ্চাদের হয়ে থাকে। তাই বাচ্চা কিংবা পূর্ণবয়স্ক সকলের দাঁত মজবুত ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য নিয়মিত ভিটামিন এ যুক্ত খাবার খেতে হবে।
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: ভিটামিন এ আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের গঠন ঠিক রাখে। কোষের গঠন ঠিক থাকার কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। তাই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে আমাদেরকে প্রচুর পরিমাণ এর ভিটামিন এ যুক্ত খাবার খেতে হবে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো ব্যতীত আরো অনেক ধরনের উপকার করে থাকে। ভিটামিন এ আমাদের জন্য
অত্যন্ত উপকারী। শরীরে ভিটামিন এ এর ঘাটতি থাকলে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দিতে
পারে। তাই আমাদেরকে প্রচুর পরিমাণ এর ভিটামিন এ যুক্ত খাবার খেতে হবে। আশা করি
ভিটামিন এ এর কাজ কি আপনারা জানতে পেরেছেন।
ভিটামিন এ জাতীয় খাবার
ইতোমধ্যে আমরা ভিটামিন এ এর কাজ কি সেই সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এই কাজগুলো যাতে
আমাদের শরীরের সঠিকভাবে কাজ করে তাই আমাদেরকে ভিটামিন এ জাতীয় খাবার খেতে হবে।
তাই এখন আপনাদের সাথে আলোচনা করব ভিটামিন এ জাতীয় খাবার সমূহ। শুধুমাত্র ভিটামিন
এ এর কাজ জানলেই হবে না কোন কোন খাবারে ভিটামিন এ রয়েছে সেই সম্পর্কেও আমাদের
ধারণা রাখতে হবে। চলুন তাহলে জানা যাক ভিটামিন এ জাতীয় খাবার গুলো কি কি।
আরো পড়ুন:খাঁটি মধু চেনার উপায়
প্রথমত ভিটামিন এ জাতীয় খাবারের উৎস হিসেবে আমরা সবুজ শাকসবজির নাম বলতে পারি।
সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণ এর ভিটামিন এ রয়েছে। ভিটামিন এ সাধারণত ক্যারোটিন
উপাদান থেকে তৈরি হয়। আর এই ক্যারোটির উপাদান সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে
রয়েছে। এরপর ভিটামিন এ জাতীয় খাবার হিসেবে বলা যায় বিভিন্ন ধরনের ফলমূল। তবে
রঙিন ফল মূলে বেশি পরিমাণ এর ভিটামিন এ রয়েছে।
আরো পড়ুন:খেজুর খাওয়ার নিয়ম
ফলমূলের পাশাপাশি আপনি ভিটামিন এ পেয়ে যাবেন প্রাণীজাত ও উদ্ভিদ জাত বিভিন্ন
উপাদানে। উদ্ভিদ জাত উপাদান গুলোর মধ্যে গাজর, পাকা পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া,
কমলালেবু,বাদাম, এভোকাডো ইত্যাদি অন্যতম। আর প্রাণীজাত খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে
মাখন, চিজ, দুধ, মাংস, ডিম, কলিজা ইত্যাদি। মাংসাশী প্রাণীদের মাংস এবং তাদের
থেকে পাওয়া মাংসাশী উপাদানগুলোতেও প্রচুর পরিমাণ এর ভিটামিন এ পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন:গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
এছাড়া মাঝেও প্রচুর পরিমাণ এর ভিটামিন এ থাকে। মাছের তেল কিংবা তেল যুক্ত মাছের
ভিটামিনের পরিমাণ বেশি থাকে। শিশুদের শরীরে ভিটামিন এ এর অভাব দূর করার জন্য
মায়ের বুকের দুধ বিশেষভাবে উপকার করে থাকে। তাই আপনার শরীরে যদি ভিটামিন এ এর
অভাব থাকে তাহলে উপরে উল্লেখিত খাবার গুলো খেতে পারেন।
আরো পড়ুন:চিরতা খাওয়ার অপকারিতা
এ সকল খাবার খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে ভিটামিন এ এর অভাব দূর হবে পাশাপাশি বিভিন্ন
ধরনের রোগ থেকে সহজে রক্ষা পাবেন। বাচ্চাদের শরীরে ভিটামিন এ এর অভাব দূর করার
জন্য মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এবং বাচ্চার বয়স যখন ৬ মাসের বেশি হবে তখন
তাকে সবুজ বা হলুদ শাকসবজি, ফলমূল,ডিম কিংবা মাংস এগুলো খাওয়ানোর মাধ্যমে শরীরে
ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। আশা করি ভিটামিন এ জাতীয় খাবার সম্পর্কে আপনারা
জানতে পেরেছেন।
ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগ
ইতোমধ্যে আমরা ভিটামিন এ এর কাজ এবং ভিটামিন এ জাতীয় খাবার সম্পর্কে জানতে
পেরেছি। এখন আমরা জানবো ভিটামিন এ এর অভাবে আমাদের শরীরে কি কি রোগ দেখা দিতে
পারে। উপরের দুইটি বিষয়ের মত এই বিষয়ে ধারণা রাখা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
ভিটামিন এ এর অভাবে কি রোগ হয়ে থাকে এই সম্পর্কে যদি আপনার ধারণা থাকে তাহলে
আপনি ভিটামিন এ এর উপকারিতা জানতে পারবেন না। চলুন তাহলে জানা যাক ভিটামিন এ এর
অভাবজনিত রোগ কি কি।
১.রাতকানা: ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা রোগটি সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।
রাতকানা রোগের লক্ষণ হল আপনি দিনের বেলায় স্বাভাবিকভাবে চোখে দেখতে পাবেন কিন্তু
রাতের বেলায় দেখতে অসুবিধা হবে। রাতে দেখতে অসুবিধা হয় বলে একে রাতকানা রোগ বলা
হয়।
আরো পড়ুন:চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে
শরীরের ভিটামিন এ এর অভাব থাকার কারণে রাতকানা রোগটি হয়ে থাকে। ভিটামিন এ এর
অভাবে বেশিরভাগ সময় রাতকানা রোগটি হয়ে থাকে। রাতকানা রোগ থেকে বাঁচতে অবশ্যই
আপনাদেরকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ জাতীয় খাবার খেতে হবে।
২.ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়: আমরা জানতে পেরেছি ভিটামিন এ আমাদের
শরীরের কোষ এবং স্কিন এর জন্য অনেক উপকারী। তাই আপনার শরীরে যদি ভিটামিন এ এর
অভাব থাকে তাহলে টিউমার বা স্কিন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। বিভিন্ন
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে অধিকাংশ মানুষের শরীরে টিউমারের মাধ্যমে ক্যান্সারের
লক্ষণ দেখা দেয়।
আরো পড়ুন:গরম পানি খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
এই টিউমার সাধারণত কোষের সুগঠিত না হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। ভিটামিন এ আমাদের
কোর্সকে সুগঠিত করতে সাহায্য করে তাই আপনার শরীরে ভিটামিন এ এর অভাব থাকলে
ক্যান্সার বা টিউমারের মত সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য
অবশ্যই আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
৩.রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়: আমরা জানি ভিটামিন এতে প্রচুর পরিমাণ এর
অ্যান্টিবডি রয়েছে এবং আরো রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টিবডি এবং
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে। তাই আপনার
শরীরে যদি ভিটামিন এ এর ঘাটতি থাকে তাহলে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে।
দীর্ঘদিনের রক্তস্বল্পতা এক সময়ে অ্যানিমিয়া রোগে পরিণত হয়। এই রোগ থেকে রক্ষা
পাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
৪.ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়: ভিটামিন এ আমাদের ত্বককে সুন্দর করতে সাহায্য
করে। তাই আপনার শরীরে যদি ভিটামিন এ এর অভাব থাকে তাহলে ত্বকের রুক্ষ শুষ্ক ভাব
দেখা দেয়। এই রুক্ষ শুষ্ক ভাব এক সময়ে অল্প বয়সে মুখে বলিরেখা সৃষ্টি করে। যা
ত্বককে একসময় বাজেভাবে নষ্ট করে দেয়।
আরো পড়ুন:নিম পাতার ক্ষতিকর দিক
ভিটামিন এ এর অভাবে উপরোক্ত সমস্যাগুলো আপনার শরীরে দেখা দিতে পারে। যা আপনাকে
সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা থেকে বাধাগ্রস্থ করবে। তাই আমাদেরকে প্রতিদিন
পর্যাপ্ত পরিমাণের ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। আশা করি ভিটামিন এ এর
অভাবজনিত রোগ কি আপনারা জানতে পেরেছেন।
মন্তব্য
সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপন করার জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া আমাদের অত্যন্ত
প্রয়োজনীয়। পুষ্টিকর খাবার খেতে হলে অবশ্যই ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারগুলো বাছাই
করতে হবে। ভিটামিন গুলোর মধ্যে প্রয়োজনীয় ভিটামিন হলো ভিটামিন এ যা আমাদের
শরীরের বিভিন্নভাবে উপকার করে থাকে। তাই ভিটামিন এ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে
আপনাদের সাথে ভিটামিন এ এর অভাবজনিত রোগ, ভিটামিন এ এর কাজ কি ও ভিটামিন এ জাতীয়
খাবার সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
আরো পড়ুন: পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি উপকৃত হবেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে
অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।এরকম আরো অনেক তথ্য সম্পর্কে জানতে
www.twestinfo.com পেজে চোখ রাখুন এবং
কমেন্টের মাধ্যমে মতামত প্রকাশ করুন।
টুইস্ট ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্টের উত্তর দেয়া হয়।
comment url