শিমুল আলু বা কাসাভা চাষ পদ্ধতি ও কাসাভা পাউডার কোথায় পাওয়া যায়
ড্রাগন ফল চাষ করার পদ্ধতি
আজকের আর্টিকেলে আলোচিত একটি বিষয় শিমুল আলু বা কাসাভা কি, শিমুল আলু বা কাসাভা
চাষ পদ্ধতি,শিমুল আলু বা কাসাভা পাউডার কোথায় পাওয়া যায় ও শিমুল আলু বা কাসাভা
কিভাবে খায় ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
যদিও আমাদের দেশে এই আলু একেবারে নতুন কিছু নয়। তবে মিষ্টি আলুর মতো দেখতে এই
আলু সম্পর্কের সবাই জানার আগ্রহ রাখে। তাই আজকে শিমুল আলু বা কাসাভা সম্পর্কে
আলোচনা করব।
সূচিপত্র:
ভূমিকা
আফ্রিকা মহাদেশের একটি জনপ্রিয় খাবার হল কাসাভা। তবে আমাদের দেশে কাসাভা শিমুল
আলু বলে বেশি পরিচিত। এই আলু দেখতে অনেকটাই মিষ্টি আলুর মত। বর্তমানে বাংলাদেশে
এই আলুর যেমন জনপ্রিয়তা রয়েছে তেমনি কৃষকরা চাষ করেও লাভবান হচ্ছে। তাই আজকের
আর্টিকেলে শিমুল আলু বা কাসাভা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করব। এই আলু সম্পর্কে
সকল ধারণা পেতে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
শিমুল আলু বা কাসাভা কি
শিমুল আলু বা কাসাভা হলো গাছের শিকড় জাত এক ধরনের আলু যা মাটির নিচে জন্মে। এই
আলু প্রচুর শর্করা সরবরাহ করে। আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় অনেক মানুষ এই আলু খেয়ে
জীবনধারণ করে থাকে। বলতে গেলে কাসাভা হল আফ্রিকান মানুষের সবচেয়ে প্রিয় এবং
জনপ্রিয় খাবার।
যদিও বাংলাদেশের সকল জেলায় এই আলুর তেমন পরিচিত নয় কিন্তু পাহাড়ি এলাকায়
দীর্ঘদিন যাবত এই আলুর চাষ করা হয়।কাসাভা গাছের পাতা দেখতে শিমুল গাছের মতো
হওয়ার বাংলাদেশের মানুষ একে শিমুল আলু বলে থাকে। শিমুল আলু বা কাসাভার বৈজ্ঞানিক
নাম-manihot esculenta ।
শিমুল আলু বা কাসাভা চাষ পদ্ধতি
শিমুল আলু বা কাসাভা বর্তমানে বাংলাদেশে বেশ পরিচিত হওয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন
জেলায় এই আলুর চাষ শুরু হয়েছে। এবং চাষীরা শিমুল আলু চাষ করে আন্তর্জাতিক
মার্কেটে বেশ লাভবান হয়ে উঠছে। তাই মানুষের মধ্যে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে শিমুল
আলু বা কাসাভা চাষ করার। তাই আপনাদের সাহায্যে শিমুল আলু বা কাসাভা চাষ পদ্ধতি
আজকের আর্টিকেলে সম্পূর্ণ আলোচনা করব। চলুন তাহলে চাষ পদ্ধতি জানা যাক।
চাষ পদ্ধতি: কাসাভা চাষ করার জন্য অবশ্যই জলবায়ু কেমন তা পরীক্ষা করে
নিতে হবে। কাসাভা সাধারণত উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চাষের উপযোগী। কাসাভা চাষ
করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে কাসাভা যেখানে চাষ করা হয় সেখানে
অন্য কোন ফসল ফলানো যায় না।
জলবায়ু: কাসাভা আপনাকে এমন সময় ফলাতে হবে যখন খরা বা শুষ্ক অবস্থা বিরাজ
করে। কারণ কাসাভা হলো খরা সহনশীল ফসল। কাসাভা ফলানোর সময় অবশ্যই তাপমাত্রা ৩০
থেকে ৩৫ ডিগ্রী হতে হবে।
মাটি প্রস্তুত করা: আপনি কাসাভা যেখানে চাষ করতে চাচ্ছেন সেই জমি
অবশ্যই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০ বা ৩০০ মিটার ওপরে চাষ করতে হবে। লবণাক্ত মাটি হওয়া
যাবে না। কিন্তু আপনি চাইলে অনুর্বর মাটি কিংবা বালি মাটিতেও কাসাভা চাষ করতে
পারবেন।
প্রথমে আপনাকে জমি ঠিক করে নিতে হবে। তারপর জমিতে চাষ করার জন্য কয়েকটি সারি
তৈরি করতে হবে।সারিগুলোর মধ্যে পিট তৈরি করে নিতে হবে এবং কাসাভা গাছ বা কাটিং
লাগাতে হবে। অবশ্যই পিটগুলো জমি থেকে একটু উপরে রাখতে হবে এতে করে গাছ শক্তি পাবে
এবং ফলন ভালো হবে।
কাটিং লাগানোর নিয়ম: প্রতিটি কাটিং এর মাঝে কিছুটা দূরত্ব রাখতে হবে। এবং
কাটিং লাগানো সময় মাটির নিচে প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার গর্ত করে লাগাতে হবে এবং পিট
মাটি থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার ওপরে থাকতে হবে। কাটিং লাগানোর বিষ থেকে ৩০ দিনের
মধ্যে নতুন কুশি বের হবে।
কাটিং লাগানোর সময়: কাসাভা যেহেতু খরা সহনশীল একটি ফসল। তাই আপনাকে এমন
সময় লাগাতে হবে যাতে মাটিতে অতিরিক্ত পানি জমা না হয়। সে ক্ষেত্রে আপনি মেয়ে
কিংবা এপ্রিল মাসে লাগাতে পারেন।
প্রয়োজনীয় সার ব্যবস্থাপনা: কাসাভা চাষে তেমন কোন সার প্রয়োগ করতে হয়
না। তবে আপনি যদি একটু বেশি জমিতে চাষ করেন তাহলে প্রতি হ্যাক্টরে ২০০ কেজি
নাইট্রোজেন ২০ কেজি ফসফরাস ও ১৫০ কেজি পটাশিয়াম সার প্রয়োগ করতে পারেন। এতে করে
আপনার ফলন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পরিচর্যা: কাটিং লাগানোর পর যখন গাছগুলো একটু বড় হবে তখন গাছের অবশ্যই
পরিচর্যা করতে হবে। প্রতি এক মাস পর পর গাছের আশেপাশের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে
এবং মাটি আলগা করে দিতে হবে এতে করে মাটির নিচে কাসাভা ফলন ভালো হয়।
অবশ্যই চাষ করার পূর্বে রোগমুক্ত কাটিং বাছাই করতে হবে। যদিও কাসাভা গাছে কোন রোগ
বালাই বা পোকামাকড় আক্রমণ করে না। কিন্তু সাপ কিংবা ইঁদুর আপনার ফসল নষ্ট করতে
পারে। তাই মাটির মধ্যে অযথা কোন গর্ত বা ইঁদুর দেখলে অবশ্যই তা নিধন করবেন।
আশা করি শিমুল আলু বা কাসাভা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন। এই আলু
চাষ করার মাধ্যমে আপনারা হয়ে যেতে পারবেন লাভবান। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে
কাসাভার বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে।
শিমুল আলু বা কাসাভা পাউডার কোথায় পাওয়া যায়
শিমুল আলু বা কাসাভা বাংলাদেশের প্রায় অনেক কৃষকরাই চাষ করে আসছেন। এ বছরে
প্রায় 28 হাজার টন কাসাভা সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশ সরকার। বর্তমানে বাংলাদেশের
রাঙ্গামাটি, সিলেট, খাগড়াছড়ি ,হবিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, মৌলভীবাজার,
কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার চাষ করা হয়। এ সকল জেলা থেকে এ বছর ৩০ হাজার
টন কাঁচা বা প্রাণ সংগ্রহ করেছে।
সংগ্রহ করা কাসাভা প্রাণ কোম্পানির প্রক্রিয়াজাত করে কাসাভা পাউডার বানিয়ে যারে
বিক্রি করা হচ্ছে। তাই এখন আপনি শিমুল আলু বা কাসাভা পাউডার যেকোনো মার্কেটে
পেয়ে যাবেন। তাছাড়া বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেজেও শিমুল আলু বা কাসাভা
পাউডার বিক্রি করা হচ্ছে।
শিমুল আলু বা কাসাভা কিভাবে খায়
শিমুল আলু বা কাসাভা খেতে অম্লীয় স্বাদের। এটিকে অনেকে মিষ্টি আলু মনে করে থাকে।
আপনি চাইলে এই আলু কাঁচা খেতে পারবেন। আবার আগুনে পুড়িয়ে নরম করে খেতে পারবেন।
অনেকে আবার অন্যান্য সবজির সাথে দিয়ে রান্না করে খাই।
কাসাভার ভাঁজি ও চিপস বানিয়েও খাওয়া যায়। কাসাভা হলো আফ্রিকানদের জনপ্রিয়
খাবার। আফ্রিকার মানুষরা কাসাভা থেকে রুটি বা অন্যান্য খাবার তৈরি করে খান।
কাসাভা একটি মিষ্টি এবং অম্লীয় সাদ যুক্ত খাবার। অনেকে আবার কাসাভা দিয়ে মিষ্টি
তৈরি করে খেয়ে থাকেন। বিভিন্ন দেশের জুস,জ্যাম বা ওয়াইন তৈরিও করা হয়। শিমুল
আলু বা কাসাভা রেসিপি সম্পর্কে জানতে নীচে লক্ষ্য করুন।
শিমুল আলু বা কাসাভা গুনাগুন
কাসাভাতে প্রচুর পরিমাণে সেলুলোজ রয়েছে। কাসাভা গমের আটার চেয়ে অনেক বেশি
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাবার। কাসাভাতে রয়েছে প্রোটিন অ্যামাইনো এসিড,
কার্বোহাইড্রেট, শর্করা, আমিষ,গ্লুকোজ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ ও ভিটামিন
সি। তাছাড়া আরও রয়েছে ফাইবার গ্রুমাটিন ও মিনারেল। প্রতি ১০০ গ্রাম কাসাভা
আলুতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অ্যামাইনোএসিড ও কার্বোহাইড্রেট।
৩৫ গ্রাম শর্করা, ১ গ্রাম আমিষ, ২ গ্রাম চর্বি, ২০ গ্রাম ফাইবার,৩৭ গ্রাম
ক্যালসিয়াম, ৭ মিলিগ্রাম আয়রন, ১৪৬ ক্যালোরি, ৩৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি,৯
মিলিগ্রাম ভিটামিন এ। এত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় বিশ্বে কাসাভা আলুকে তিন নম্বর
স্থানে রাখা হয়েছে।
শিমুল আলু বা কাসাভা চাষ এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতিতে এবং কৃষকদের সচ্ছল
জীবন যাপনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। শিমুল আলু বা কাসাভাকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায়
বাজারজাত করে বিক্রি করা যায়। বিভিন্ন দেশে এই আলু রুটি কিংবা বিস্কুট বানিয়েও
বাজারজাত করা হয়। শিমুল আলু বা কাসাভা গুনাগুন রয়েছে প্রচুর।
শিমুল আলু বা কাসাভা উপকারিতা
শিমুল আলু বা কাসাভার প্রচুর পুষ্টিগুণ থাকায় এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকারে
আসে। ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে হৃদরোগ জনিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে
শুধুমাত্র কাসাভা আলু খাওয়ার কারণে। চলুন তাহলে শিমুল আলু বা কাসাভা উপকারিতা
সম্পর্কে জানা যাক।
ডায়াবেটিস: কাসাভাতে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড ও কার্বোহাইড্রেট। যা আমাদের
শরীরের রক্তে বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা করে। আমরা জানি ডায়াবেটিস রোগ হওয়ার
পেছনে একটাই কারণ তা হলো রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমাণ বৃদ্ধি হওয়া। তাই কাসাভা
খাওয়ার ফলে আমাদের রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ ঠিক রাখে।
হৃদ রোগ: আমরা অনেকেই হৃদ রোগে আক্রান্ত। তাই যাদের হৃদ রোগের সমস্যা
রয়েছে তারা কাসাভা পাউডারের রুটি তৈরি করে খেতে পারেন এতে করে আপনার রক্তের নালী
পরিষ্কার রাখবে এবং সহজেই রক্ত চলাচল করতে পারবে।
হজমের সমস্যা: কাসাভাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যার কারণে আমাদের
হজমের সমস্যা থেকে রক্ষা করে। ফাইবার আমাদের পেটে খাবারকে সহজে হজম করতে সাহায্য
করে এতে করে বদহজম বা ডায়রিয়া জাতীয় সমস্যা থেকে রক্ষা পাই।
ত্বক সুন্দর করে: কাসাভাতে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি। ভিটামিন এ
এবং ভিটামিন সি আমাদের ত্বকের সুন্দর করে। ত্বকে বিভিন্ন রেস ও ব্রণের সমস্যা
থেকে রক্ষা করে।
হাড় মজবুত করে: কাসাভাতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে।এই
ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরে বিভিন্ন হাড়কে মজবুত করে। তাই যাদের অযথা হাত এবং পা
ব্যথা করে তারা নিয়মিত কাসাভা আলু খেতে পারেন এতে করে আপনার হাতের ও পায়ের
ব্যথা সহজে সেরে যাবে।
তাছাড়া কাসাভা আমাদের শরীরে আরো নানান রকমের উপকারে আসে। তাই আমরা সকলেই চেষ্টা
করব কাসাভা আলু খাওয়ার। সুতরাং বলা যায় যে শিমুল আলু বা কাসাভা উপকারিতা
অপরিসীম।
পরিশেষে কথা
বর্তমানে বিশ্বের শিমুল আলু বা কাসাভা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাই বাংলাদেশেরও
বিভিন্ন জেলায় কাসাভা চাষ শুরু হয়েছে। এবং কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছে কাসাভা চাষ
করার মাধ্যমে। তাই আপনিও চাইলে শিমুল আলু বা কাসাভা চাষ পদ্ধতি দেখে চাষ করতে
পারেন। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে ।এরকম আরো আর্টিকেল পেতে
www.twestinfo.com পেজে চোখ রাখুন।
টুইস্ট ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্টের উত্তর দেয়া হয়।
comment url