মানবদেহের তন্ত্রের তালিকা ও মানবদেহ সম্পর্কে সাধারন জ্ঞান
চোখের বিভিন্ন অংশের বিবরন , রোগ ও প্রতিকার
প্রিয় পাঠকগণ, আজকের আর্টিকেলে মানবদেহের তন্ত্রের তালিকা, মানবদেহের হাড় কয়টি
ও হাড়ের নাম,মানবদেহে নটোকর্ডের অবস্থান ও মানবদেহ সম্পর্কে সাধারন জ্ঞান
ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হবে। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়লে আপনি মানব দেহের
বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। সম্পূর্ণ তথ্য জানতে অবশ্যই সম্পূর্ণ
আর্টিকেলটি পড়ুন।
সূচিপত্র:
ভূমিকা
সাধারণ জ্ঞান বা পড়ালেখার জন্য মানবদেহের বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে জানতে হয়। এর
মধ্যে মানবদেহের হাড় কয়টি ও হাড়ের নাম, মানবদেহের তন্ত্রের তালিকা ও মানবদেহ
সম্পর্কে সাধারন জ্ঞান যেন দৈনন্দিন জীবনে অত্যাবর্শকীয় কিছু তথ্য যা না জানলেই
নয়। তাই আপনাদের এই সকল তথ্য একটি আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানাতে আজকের এই
আর্টিকেল লিখা। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে মানব দেহ
সম্পর্কে আপনি যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন।
মানবদেহের তন্ত্রের তালিকা
মানব দেহ বিভিন্ন তন্ত্র নিয়ে গঠিত। এ সকল তন্ত্র মানবদেহের অপরিহার্য হিসেবে
প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরা এবং বেঁচে থাকার
মূল উৎস। তন্ত্রের বিভিন্ন কার্যকলাপের জন্য আমরা সুস্থ সবল জীবন যাপন করতে পারি।
চলুন তাহলে মানবদেহের তন্ত্রের তালিকার সম্পর্কে জানা।
- সংবহন তন্ত্র: সংবহনতন্ত্রের প্রধান কাজ হল আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন করা। অক্সিজেন পুষ্টি ও বিভিন্ন পদার্থ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন করা। হৃদপিণ্ড ধমনীয় শিরার মাধ্যমে সংবহনতন্ত্র তাদের কাজ সম্পূর্ণ করে। সংবহনতন্ত্রের কারণে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা ঠিক থাকে।
- পরিপাক তন্ত্র: পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের গ্রহণ কৃত খাদ্য ও পুষ্টি দ্রব্য শোষণ করে এবং বজ্রের মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে তা অপসারণ করে দেয়। পরিপাকতন্ত্র সাধারণত মুখ অন্যনালি পাকস্থলী ও অন্তরে সাহায্যে তার কাজ করে থাকে।
- রেচন তন্ত্র: রেচনতন্ত্রের কাজ হল আমাদের শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় বজ্রপদার্থ নিষ্কাশন করা।
- অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতন্ত্র: অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি আমাদের শরীরের ভিতরে বিভিন্ন হরমোনের কাজ সম্পূর্ণ করে।
- ত্বক তন্ত্র: তন্ত্র আমাদের শরীরের বাহিরের বিভিন্ন পরিবেশ থেকে আমাদের শরীরের ভিতরের অঙ্গ কে সুরক্ষা করে। তন্ত্র মানবদেহের সবচেয়ে বৃহত্তম তন্ত্র।
- লসিকা তন্ত্র: লসিকা তন্ত্র আমাদের শরীরের বিভিন্ন ক্ষতিকারক জীবাণু থেকে রক্ষা করে। লসিকা নালী ও গ্রন্থির সমন্বয়ে এই তন্ত্র গঠিত যা সমগ্র দেহে পরিষ্কার তরল পদার্থ প্রবাহিত করে।
- পেশি তন্ত্র: পেশী তন্ত্র হলো আমাদের শরীরের বাহিরে অঙ্গের গঠন। যার মাধ্যমে আমরা শরীরের বিভিন্ন অংশকে সঞ্চালন করতে পারি এবং হাঁটাচলা বা বিভিন্ন কাজ করতে পারি।
- স্নায়ু তন্ত্র: স্নায়ুতন্ত্র সাধারণত আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে শরীরে বিভিন্ন পেশির শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সংকোচন নির্দেশ প্রদান করেন।
- বৃক্ক তন্ত্র: বৃক্ক তন্ত্র আমাদের শরীরের রক্তকে পরিষ্কার করে এবং অপ্রয়োজনীয় বা উৎপাদিত মূত্র দেহ থেকে বিপাকীয় বজ্র অপসারিত করতে সাহায্য করে।
- মূত্র তন্ত্র:আমাদের শরীরে উৎপাদিত মূত্র এই মূত্রতন্ত্রের মাধ্যমে আমরা শরীর থেকে বাহিরে অপসারিত করি।
- প্রজনন তন্ত্র:প্রজনন তন্ত্রের মাধ্যমে আমরা আমাদের আগামী ভবিষ্যতের সন্তান-সন্তানি উৎপাদন করতে পারি।
- শ্বসন তন্ত্র: সনতন্ত্রের সাহায্যে মানবদেহের ফুসফুস বায়ু দূষণ এবং অপসারণ করতে পারে। শ্বসনতন্ত্রের মাধ্যমে অক্সিজেন শোষণ এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড অপসারণ করে আমরা শ্বাস কাজ সম্পন্ন করি।
- কঙ্কাল তন্ত্র: কঙ্কালতন্ত্র সাধারণত মানব দেহের হাড় এবং অঙ্গগুলোর গঠন কাঠামো তৈরি করে যা একজন মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি তন্ত্র। এই তন্ত্রের মাধ্যমে একজন মানুষ তার সঠিক শারীরিক গঠন লাভ করতে পারে।
আশা করি মানবদেহের তন্ত্রের তালিকা আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে পেরেছি। মানবদেহের
প্রতিটি তন্ত্র বিভিন্ন অপরিহার্য কাজ সম্পন্ন করে থাকে এবং আমাদের জীবনকে
সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারি।
মানবদেহের হাড় কয়টি ও হাড়ের নাম
হাড় হল একটি কঠিন অঙ্গ যা আমাদের দেহকে বিভিন্ন ভাবে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। হার
একটি প্রাণীর কঙ্কাল তৈরি করতে সাহায্য করে এবং লোহিত ও স্মৃতি কণিকা তৈরি করে।
তাছাড়া রাখো নিশ পদার্থ জমা রাখে শরীরের গঠন তৈরি করে এবং একটি প্রাণীকে চলাচলের
সহায়তা করে। একজন মানুষের জন্মের সময় ৩০০ টির বেশি হাড় থাকে।
তারপর প্রাপ্তবয়স্ক হলে ছোট ছোট হাড়গুলো অন্যহাড়ের সাথে সংযুক্ত হয়ে মোট ২০৬
টি হাড় হয়। এবং পরিপূর্ণভাবে একজন মানুষের দেহ গঠনে সহায়তা করে। তাই বলা হয়ে
থাকে মানবদেহে হাড় ২০৬টি। চলুন তাহলে মানবদেহের হাড় কয়টি ও হাড়ের নাম
সম্পর্কে জানা যাক।মানবদেহে হাড় ২০৬টি। হাড়ের নাম নিম্নরূপ:
মানব হাড়ের সংখ্যা গণনার জন্য মানবদেহের হাড় গুলোকে চার অংশে ভাগ করা হয়েছে।
সেগুলো হলো:
- করোটি
- মেরুদন্ড
- বক্ষপিণ্ড
- উপাঙ্গীয়
১.করোটি।করোটিতে মোট ২৯ টি হাড় রয়েছে। করোটিকে আবার ২ অংশে ভাগ করা হয়েছে
সেগুলো হল:
- করোটিকা।
- মুখমণ্ডলের অস্থিসমূহ।
করোটিকা:করোটিকা হল মানবদেহের খুলির মতো অংশ। করো টিকাতে মোট হাড়ের
সংখ্যা ৮ টি। হাড় গুলো হলো:
- স্ফেনয়েড ১ টি
- টেম্পোরাল ১ জোড়া
- এথময়েড ১ টি
- প্যারাইটাল ১ জোড়া
- অক্সিপিটাল ১ টি
- ফ্রন্টাল ১ টি
মুখমন্ডলীয় অস্থি ১৪ টি যথা:
- ঊর্ধচোয়াল ১ জোড়া
- ম্যান্ডিবল ১ টি
- জাইগোম্যাটিক ১ জোড়া
- ন্যাসাল ১ জোড়া
- প্যালেটাইন ১ জোড়া
- ভোমার ১ টি
- ইনফিরিয়র ন্যাসাল কংকা ১ জোড়া
কর্ণাস্থি ৬টি যথা:
- মিলয়াস ২টি
- স্টেপিস ২টি
- ইনকাস ২ টি
- হাইওয়েড ১টি
২) মেরুদন্ড ২৬ টি হাড়ের নাম যথা:
- সারভাইকাল ৭টি
- থোরাসিক ১২ টি
- লাম্বার ৫ টি
- স্যাক্রাম ১ টি
- কক্সিস ১ টি
৩)বক্ষপিন্ড ২৫ টি হাড়ের নাম যথা:
- পর্শুকা ২৪ টি
- স্টার্নাম ১ টি
৪)উপাঙ্গীয় কঙ্কাল:উপাঙ্গীয় কঙ্কাল বলতে (দুই বাহু ও বক্ষ অস্থিচক্র)
এবং (দুই পা ও শ্রোণী অস্থিচক্র) একত্রে বোঝায়।উপাঙ্গীয় কঙ্কালে মোট ১২৬ টি হাড়
রয়েছে।
বক্ষ অস্থিচক্র ৮ টি হাড় রয়েছে যথা:
- বক্ষ-অস্থিচক্র ৪টি
- ক্লাভিকল ২ টি
- স্ক্যাপুলা ২ টি
বাহু ৬০টি হাড় রয়েছে যথা:
- হিউমেরাস ১×২ টি
- রেডিয়াস ১×২ টি
- আলনা ১×২ টি
- কার্পাল ৮×২ টি
- মেটাকার্পাল ৫×২ টি
- ফ্যালাঞ্জেস ১৪×২ টি
শ্রেণী-অস্থিচক্র ২টি হাড় রয়েছে যথা:
- ইলিয়াম ১ টি
- ইশ্চিয়াম ১ টি
- পিউবিস ১ টি
পা ৬০ টি হাড় রয়েছে যথা:
- ফিমার ১×২ টি
- টিবিয়া ১×২ টি
- ফিবুলা ১×২ টি
- প্যাটেলা ১×২ টি
- টার্সাল ৭×২ টি
- মেটা টার্সাল ৫×২ টি
- ফ্যালাঞ্জেস ১৪×২ টি
উপরোক্ত হাড় গুলো নিয়ে মানব দেহ গঠিত। আশা করি মানবদেহের হাড় কয়টি ও হাড়ের
নাম সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন। এ বিষয়ে আরো তথ্য পেতে নিচে লক্ষ্য করুন।
মানবদেহে নটোকর্ডের অবস্থান ব্যাখ্যা করো
মানব দেহের নটোকর্ড একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। নটোকর্ড হলো একটি নরম অখন্ডয়িত ও
দণ্ডকার অঙ্গ। যা একটি মেরুদন্ডী প্রাণীর পৃষ্ঠদেশ বরাবর সারা জীবন বা ভূমি ও
অবস্থায় বিদ্যমান থাকে। মানবদেহে নটোকর্ড শুধু ভ্রুণীয় অবস্থায় পৃষ্ঠীয় দেশ
বরাবর বিদ্যমান থাকে।
পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় মেরুদন্ডে রূপান্তরিত হয়। তবে অনেক প্রাণীর নটোকর্ড ভ্রুণীয়
অবস্থা থেকে শুরু করে পূর্ণাঙ্গ অবস্থায়ও থাকে। যেমন: ইউরোকর্ডারটা পর্বের
প্রাণীদের লেজের সম্পূর্ণ অংশে নটোকর্ড থাকে । আবার সেফালোকর্ডাটা পর্বের
প্রাণীদের সারা জীবনই নটোকর্ড থাকে।
মানবদেহ সম্পর্কে সাধারন জ্ঞান
১.মানবদেহের হাড় কয়টি?
=মানবদেহের ২০৬ টি হাড় রয়েছে।
২.মানবদেহের সবচেয়ে বড় অস্থি কোনটি?
=মানবদেহের সবচেয়ে বড় অস্থি হলো ফিমার।এটি সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী অস্থি।
৩.মানবদেহের সবচেয়ে বড় তিনটি হাড়ের নাম কি?
=মানবদেহের সবচেয়ে বড় তিনটি হাড়ের নাম হলো ফিমার,টিবিয়া ও ফিবুলা।
৪.মানবদেহের সবচেয়ে বড় তন্ত্রের নাম কি?
=মানবদেহের সবচেয়ে বড় তন্ত্রের নাম হলো লিভার বা যকৃত।
৫.মানবদেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গের নাম কি?
=মানবদেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গের নাম ত্বক।
৬.মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কত?
=মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হলো ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি
সেলসিয়াস।
৭.মানবদেহের প্রধান রেচন অঙ্গ কোনটি?
=মানবদেহের প্রধান রেচন অঙ্গ বৃক্ক বা কিডনি।
৮.মানবদেহে পানির পরিমাণ শতকরা কত ভাগ?
=মানবদেহে পানির পরিমাণ শতকরা ৫০-৬০% ।
৯.মানবদেহে জিনের সংখ্যা কত?
=মানবদেহে জিনের সংখ্যা ৪০০০০।
১০.মানবদেহে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড কয়টি?
=মানবদেহে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড ৯ টি।
১১.মানবদেহে প্রতিদিন কতটুকু পানি প্রয়োজন?
=মানবদেহে প্রতিদিন ২-৩ লিটার পানি প্রয়োজন।
১২.মানবদেহের সবচেয়ে বড় লসিকা গ্রন্থি কোনটি?
=মানবদেহের সবচেয়ে বড় লসিকা গ্রন্থি প্লীহা।
১৩.মানবদেহের সবচেয়ে ছোট অস্থি কোনটি?
=মানবদেহের সবচেয়ে ছোট অস্থি স্টেপিস।
১৪.মানবদেহে অটোজোম সংখ্যা কয়টি?
=মানবদেহে অটোজোম সংখ্যা ২২ জোড়া বা ৪৪ টি।
১৫.মানবদেহে কোন ভিটামিন তৈরি হয় না?
=মানবদেহে ভিটামিন সি তৈরি হয় না।
পরিশেষে কথা
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের মাঝে মানবদেহ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
তুলে ধরার চেষ্টা মাত্র। আপনাদের আশেপাশে যদি কোন শিক্ষার্থী বন্ধুমানবদেহের
তন্ত্রের তালিকা, মানবদেহের হাড় কয়টি ও হাড়ের নাম বা মানবদেহের সম্পর্কে
সাধারণ জ্ঞান জানতে চায় তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন ।এরকম আরো তথ্য
পেতে www.twestinfo.com পেজে চোখ রাখুন।
টুইস্ট ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্টের উত্তর দেয়া হয়।
comment url