চোখের বিভিন্ন অংশের বিবরন , রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
চোখের গঠন, বিভিন্ন অংশের কাজ চোখ একটি জটিল অঙ্গ। আমাদের কাছে থাকা মূল্যবান একটি সম্পদ।অল্প কোন কারনে চোখে অনেক বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে। অধিকাংশ মানুষ এখন চশমা ব্যবহার করছে। তাছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন :মোবাইল ,কম্পিউটার,ট্যাব, ipad ,laptop ইত্যাদির বেশি ব্যবহারের ফলে আমাদের চোখে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।অল্প বয়সি বাচ্চা বা কিশোর এখন মোবাইল নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকে।
বিভিন্ন গেমস ফেসবুকিং ইত্যাদিতে আসক্ত থাকার কারণে তাদের অকালে চোখে সমস্যা দেখা
দেয়। তাই অল্প বয়সে তাদের মাত্র অতিরিক্ত পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করতে হয়। তাই
চোখের রোগ সম্পর্কে জানা অনেক প্রয়োজন।চোখের বিভিন্ন অংশ, রোগ ও তার প্রতিকার
সম্পর্কে জানতে অবশ্যই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন। আশা করি আপনাদের কৌতূহলময় কিছু
জিনিস তুলে ধরতে পেরেছি।
সূচিপত্র: চোখের বিভিন্ন অংশ , রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে
আজকের পোষ্টে উপরোক্ত বিষয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
বিভিন্ন অংশের বিবরন:
১.শ্লেতমন্ডল:শ্বেতমন্ডল চোখের সাদা অংশ।চোখের বাহিরের আবরনের ৫/৬ অংশ
জুরে অবস্থান করে।এটা অস্বচ্ছ সাদা ও সাদা বর্ণের কোলোজেন দ্বারা গঠিত। এটার
ভিতরে আলো প্রবেশ করতে পারে না।
২.কর্নিয়া:এটি একটি স্বচ্ছ পর্দা যা চোখের সামনের অংশ ঢেকে রাখে।চোখের
বাহিরের আবরনের ১/৬ অংশ স্থান নিয়ে অবস্থিত।এতে কোনো রক্ত জালিকা নেই তাই দেখতে
স্বচ্ছ।
৩.পিউপিল:কর্নিয়ার পিছনে চোখের খোলা অংশে কোরয়েড স্তরটি স্ক্লেরা থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়ে বৃত্তাকার থালার মতো মে অংশ গঠন করে তাকে আইরিশ বলা হয়। ২
ধরনের অনৈচ্ছিক পেশি দিয়ে আইরিশ গঠিত।
৪.লেন্স:আমাদের চোখের লেন্স একটি উত্তল লেন্স।তার মাধ্যমে আমরা কোনো
কিছু দেখতে পাই। আইরিশ এর পিছনে থাকা উত্তল অংশকে লেন্স বলে।
৫.রেটিনা:রেটিনা চোখের ভিতরের অংশ। এটি হালকা ও সংবেদনশীল।আলোক রশ্মি
চোখের লেন্সের মধ্য দিয়ে রেটিনার মধ্যে পড়ে। তা অপটিক স্নায়ু মাধ্যমে আমাদের
মস্তিষ্কে পৌঁছায়।
৬.অ্যাকুয়াস হিউমর:লেন্স ও কর্নিয়ার মধ্যে স্বচ্ছ জলীয় তরল পদার্থ
হলো অ্যাকুয়াস হিউমর। কর্নিয়া ও লেন্সকে স্বাস্থ্যকর রাখে , বাতাস ,
ধুলাবালি থেকে রক্ষা করে।
৭.অপটিক নার্ভ:অপটিক নার্ভ আমাদের রঙ , ছবি ও উজ্জ্বলতা বোঝানোর জন্য
প্রয়োজনীয় সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছায়।
৮.অন্ধবিন্দু:অন্ধবিন্দু আমরা দেখতে পাই না। এটি চোখের দৃষ্টি পটের
মাঝামাঝি অবস্থান করে।
৯.সিলিয়ারি বডি:আইরিশ ও কোরয়েড এর সংযোগস্থল।
চোখের বিভিন্ন রোগের লক্ষন:
১.হাইফেমা:চোখের রক্তনালী ছিড়ে গেলে এ সমস্যা হয়। এতে চোখের সামনে রক্ত
জমে থাকে। আইরিশ ও কর্নিয়াতে দেখা যায়। এই সমস্যা হলে অবশ্যই চক্ষু ডাক্তার
দেখাতে হবে নতুবা গুরুতর অবস্থায় যেতে পারে।
২.মাকুলার ডিজেনারেশন:এই রোগে চোখের মাকুলা সমস্যা হয়। চোখের দৃষ্টি
তৃক্ষ হয়। মনে হয় বৃকট কিছু চোখের সামনে আছে।কনট্রাস্ট সংবেদনশীলতা, চাক্ষুষ
তীক্ষতা কমে যায়।
৩.ইউভাইটিস:এই রোগে চোখ ফোলা ভাব ও জ্বালাপোড়া হবে। টিস্যু ধংস করে ,
দৃষ্টি শক্তি কমে যায়। চোখের সামনে,সিলিয়ারে শরীর ও চোখের পিছনের অংশকে
প্রভাবিত করে।
৪.রেটিনার বিচুৎতি:এই রোগের তেমন কোনো উপসর্গ েনেই। কিছু পরিবর্তন দেখা
দিতে পারে। আলোর ঝলকানি, ফ্লোটারের দৃশ্যমান, পেরিফেরাল দৃষ্টি ।
৫.কর্নিয়াল ঘর্ষন:এটি খুব জোরে ঘষা ও নখ দিয়ে খোচা লাগার কারণে হতে
পারে।কোনো প্রকার কণা বা পোকা গেলে আমরা চোখকে অনেক ঘষি যার কারনে চোখের
কর্নিয়া ব্যাধিত হতে পারে।
৬.শুকনো চোখ:এটি একটি সাধারন রোগ। চোখে অশ্রু পর্যাপ্ত তৈরি না হলে এই
রোগ হয়। অশ্রু আমাদের চোখকে লুব্রিকেট করতে না পারলে এই রোগ হয়।
৭.অ্যাম্ভলিওপিয়া:এটি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। এই রোগ হলে
চোখের দৃষ্টি কমে যায়, মস্তিষ্ক থেকে চোখ সঠিক উদ্দিপনা পায় না।
৮.ডায়াবেটিস রেটিনা ক্ষয়:ডায়াবেটিস রোগীদের এই রোগ বেশি দেখা যায়। রক্তে
শর্করা বেশি হওয়ায় রক্ত নালী ফুলে যায়। এতে করে ঝাপসা দেখা , দুর্বল রাতের
দৃষ্টি , রং না চিনা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৯.দৃষ্টিভঙ্গি:এই সমস্যায় চোখের উপর আলো ঠিক মতো পড়ে না । তাই তীব্র
আলোতে ঝাপসা দেখা বা তরাঙ্গায়িত করে।
১০.ছানি:৪০ বছর বয়সের মানুষের এই রোগ বেশি হয়। এতে চোখের লেন্স মেঘলা
হয়ে যায়। ছানি পড়লে অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বেরে যায়।
১১.ল্গুকোমা:
- চোখ ব্যাথা
- চোখ লাল হয়ে থাকা
- বমি বমি ভাব
- মাথা ব্যাথা
- ঝাপসা চোখ
১২.রাতকানা:এই রোগ ভিটামিন ডি এর অভাবে হয়ে থাকে। এতে চোখের লেন্স ঝাপসা
হয় । দিনের আলোয় দেখতে পায় কিন্তু রাতের অন্ধকারে কিছুই দেখে না।
চোখ দেখে রোগ নির্ণয়
অনেক সময় আমরা চোখ দেখেও বলতে পারব যে চোখে কি সমস্যা হয়েছে। শুধুমাত্র কিছু
কথা জেনে রাখলে আমাদের এই সমস্যার জন্য হাসপাতাল বা ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে
না। এই বিষয়ে জানতে অবশ্যই সম্পূর্ণ পড়ুন। অনেক সময় চোখে বিভিন্ন ছাপ বা
চোখের রং পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন আমরা কিভাবে বুঝব যে কি সমস্যা হয়েছে সে
সম্পর্কে নিজে কিছু তথ্য দেওয়া রইল।
১.চোখে রক্তের ছাপ: চোখের সাদা অংশে অনেক সময় রক্তের দাগ দেখা
যায় যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় সাবকনজাংকটিভাল হেমারেজ। এরকম দাগ দেখলে অনেকেই ভয়
পেয়ে যায়। এটি হওয়ার কারণ হলো আমাদের চোখে অনেক ছোট ছোট রক্তনালী রয়েছে ।এই
রক্তনালি ফেটে ছোট আকারের রক্ত চোখের সাদা অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
এরকম হলে কিছুদিন থাকে আবার কিছু দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ সেরে যায় অনেকেই আমরা
বুঝিনা এরকম ঘটনার কারণ কি। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ বা যাদের রক্ত জমাট
বাঁধে না এরকম রোগীর চোখে রক্তের ছাপ দেখা যায়। চোখে রক্ত জমাট বাধা যদি ঘন ঘন
হয় তাহলে আপনাদের উচিত হবে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে সঠিক ওষুধ সেবন করা।
২. চোখে তারার মত ছাপ: আমাদের চোখের তারা উজ্জ্বল আলোতে ছোট হয়ে
যায় আবার অল্প আলোতে বড় হয়ে যায়। এরকম পরিবর্তন এর গতি কমে গেলে কিছু
অসুখ-বিসুখের লক্ষণ দেখা দেয়। সাধারণত যারা মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে তাদের এই
সমস্যা বেশি দেখা দেয়। আবার কোকেন বা হেরোইনের মতো মাদক সেবন করলে চোখের মনি
ছোট হয়ে যায়।
৩. কর্নিয়া চারপাশের রিঙ: আমাদের চোখে সাদা অংশের সামনে একটি
পাতলা স্বচ্ছ পর্দা রয়েছে। এই স্বচ্ছ পর্দায় অনেক সময় সাদা বা ধূসর রং এর
রিউ দেখা যায়। এরকম ভিউ দেখা গেলে বুঝতে হবে শরীরে উচ্চমাত্রায় কোলেস্ট্রল বা
হার্ট ডিজিজের রোগ রয়েছে। অ্যালকোহল আসক্ত হলেও এরকম হয়ে থাকে তাছাড়া বৃদ্ধ
মানুষের চোখে রিঙ দেখা যেতে পারে।
৫. লাল বা হলুদ রঙের চোখ: অনেক সময় আমাদের শরীরের নানা পরিবর্তন
বা সমস্যার জন্য চোখের সাদা অংশ লাল বাহলুদ রঙের হয়ে যায়। চোখে জীবানু
সংক্রমণ হলে চোখ লাল হতে পারে তাছাড়া মদ্যপান কিংবা মাদক সেবনের জন্য চোখ লাল।
দীর্ঘদিন চোখের রং লাল হয়ে থাকলে বুঝতে হবে চোখে মারাত্মক সংক্রমণ হয়েছে।
এখন অনেকেই ফ্যাশন ট্রেন্ডের জন্য চোখে কন্টাক লেন্স ব্যবহার করে এতে করেও চোখ
লাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হলেও চোখের সাদা অংশ হলুদ
বর্ণের হয়ে যায় এ সময় লিভার ঠিকমতো কাজ করে না এ কারণে চোখে হলুদ বর্ণ ধারণ
করে।
৬. চোখ ফুলে যাওয়া: অতিরিক্ত ঘুমের কারণে ও চোখ ফুলে যেতে পারে।
কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় চেয়ে বেশি ফুলে গেলে বুঝতে হবে থাইরয়েডের সমস্যা
তৈরি হয়েছে এর জন্য দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হবে। তাছাড়া চোখে আঘাত জনিত
কারণেও চোখ ফুলতে পারে কান্নাকাটি বা চোখের পেছনে টিউমারের জন্য হতে পারে।
চোখের রোগ প্রতিকার
- প্রতিদিন খ্যাদাবাসে সবুজ শাক-সবজি রাখা ।
- ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া যেমনঃ লেবু,কমলা লেবু,আমলকি ইত্যাদি ।
- আয়োডিন যুক্ত খাবার খাওয়া ।
- প্রতিদিন চোখ পরিষ্কার করা ।
- সূর্যের অতি UV রশ্নিতে সান প্রটেক্টর ব্যাবহার করা ।
- চোখকে মাত্রা অতিরিক্ত না ঘসা ।
শেষ কথা:
চোখ আমাদের দেহের অতি মূল্যবান একটি অঙ্গ। চোখের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
যত্ন নেয়ার জন্য অবশ্যই আমাদেরকে সকল বিষয়ে জানতে হবে ।আশা করি চোখের সকল
বিষয়ের কিছুটা হলেও তুলে ধরতে পেরেছি।আরো বিষয়ে জানতে চাইলে কমেন্ট বক্সে
জানাবেন এবং www.twestinfo.com ফলো করুন।
টুইস্ট ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্টের উত্তর দেয়া হয়।
comment url