তোকমা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
লবঙ্গ (clove) এর যত উপকারিতা
আমাদের আশেপাশে প্রাকৃতিক অনেক ঔষধিগুণ সম্পূর্ণ বীজ রয়েছে যা আমাদের শরীরের
জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার মধ্যে তোকমা দানা একটি। তোকমা খাওয়ার নিয়ম,
তোকমা দানার পুষ্টিগুণ, তোকমা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন।
সূচিপত্র
ভূমিকা
স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের জন্য তোকমা একটি পরিচিত খাবার। তোমাকে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ভিটামিন। যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত
প্রয়োজনীয়।তোকমা খাওয়ার কারণে শরীরে নানাবিধ সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
যদিও এটি সকলের কাছে পরিচিত নয় এবং তোকমা দানা অনেকেই অপছন্দ করে থাকেন। তোকমা
দানার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানাতে ও তোকমা খাওয়ার উপকারিতা জানাতে আজকের এই
প্রচেষ্টা। আশা করি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে।
তোকমা কি
তোকমা হলো কালো রঙের একটি বীজ। কখনো কখনো এটি সাদা বা বাদামি রঙেরও হয়ে থাকে।
এটি মূলত করলা গাছে হয়ে থাকে। তোকমা দানার অন্য নাম বিলাতি তুলসী। তোকমা দানা
কালো রঙের এবং কিছুটা লম্বাটে আকারের হয়ে থাকে।
আরো পড়ুন:ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তোকমা উৎপাদন করা হয় মেক্সিকোতে। এটি বিভিন্ন পানীয় ও
মিষ্টি জাতীয় খাবারের সাথে খাওয়া হয়। এই বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন,
ফাইবার, ক্যালরি, আয়রন, আশঁ ইত্যাদি। অনেকে এটি শরবতের সাথে খেয়ে থাকে।
তোকমা দানার পুষ্টিগুণ
বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক তাদের রোগীদের জন্য তোকমা খাওয়ার উপদেশ দিয়ে
থাকেন। কারন তোকমাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ। কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট,
প্রোটিন ও সামান্য পরিমাণ ফাইবার রয়েছে তোকমা দানায়।
তাছাড়া রয়েছে ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এর মত অনেক প্রয়োজনীয়
ভিটামিন যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগবালাই দূরীকরণের বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা
করতে সাহায্য করে। পরিমাণ করে বলতে গেলে ক্যালরি ০.৬%, ভিটামিন কে ১৩%,
ক্যালসিয়াম ০.৫%, ভিটামিন এ ৩%, আয়রন ০.৫%, ম্যাঙ্গানিজ ১.৫% থাকে।
আরো পড়ুন:তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
এছাড়াও রয়েছে ওমেগা থ্রি যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। তাই
বলা যায় তোকমা দানার পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নিয়মিত
তোকমা খাওয়ার ফলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
তোকমা খাওয়ার নিয়ম
তোকমা খাওয়ার অনেক নিয়ম রয়েছে। অনেকেই ডেজার্ট বা শরবত বানিয়ে খেতে পছন্দ
করে। তোকমা খাওয়ার নিয়ম খুবই সহজ। তোকমা খাওয়ার জন্য অবশ্যই কিছুক্ষণ ভিজিয়ে
রাখতে হয়। ১/২ সেদিন চামচ তোকমা পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ
ভিজিয়ে রাখার পর লক্ষ্য করবেন তোকমা ফুলে নরম পিচ্ছিল আকারের হয়ে গেছে।
আরো পড়ুন:ব্লুবেরি ফলের উপকারিতা
ভেজানো পানি ফেলে দিয়ে তোকমা আলাদা করে নিন। এবার এটি খাওয়ার উপযোগী হয়ে
গিয়েছে। তোকমা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। তোকমার শরবত, ডেজার্ট বা ওজন কমানোর
নিয়ম মেনেও তোকমা খাওয়া যায়। তবে শরবত খাওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে
যাতে চিনি ব্যতীত খাওয়া হয়। তোকমা খাওয়ার নিয়ম বলতে বুঝতে পারা গেল যে এটি
কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায়।
তোকমা কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে তোকমা কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়। আসলে তোকমা
বেশিক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয় না। তোকমা পরিমাণ অনুযায়ী পর্যাপ্ত পানি দেওয়া হলে
অল্প সময়ে এটি খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে। তোকমা সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ মিনিট
ভিজিয়ে রাখতে হয়।
এই সময়ের মাঝে এটি ভালো মতো খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে। তবে বেশিক্ষণ ভিজিয়ে
রাখার ফলে এটির পুষ্টিগুণ কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। তাই এই সময়ে এবং এর থেকে কম
সময়ও ভিজিয়ে তোকমা খাওয়া যায়।
তোকমা খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের দৈনন্দিন খাবারের মধ্যে তোকমা রাখাটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ তোকমা
খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতে তোমায় থাকা বিভিন্ন
পুষ্টিগুণ উপাদান যা আমাদের শরীরের রোগ বালাই থেকে রক্ষা করে। চলুন তাহলে তোকমা
খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানা যাক।
আরো পড়ুন:মালবেরি ফলের উপকারিতা
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে:অনিয়মিত খাবার খাওয়ার কারণে বা অপুষ্টিকর খাবার খাওয়ার কারণে অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগেন। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করতে তোকমা বিশেষ ভাবে উপকার করে।তোকমা ভিজিয়ে রাখার পর একটি জেলির ন্যায় হয়ে যায়। এবং তোকমা তে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ভিজানো জেলির ন্যায় তোকমা খাওয়ার ফলে এটি আমাদের মল থেকে নরম করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা করে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: নিয়মিত তোকমার জুস খাওয়ার ফলে আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। হজম শক্তির লোভ পেলে আমাদের খাবারের প্রতি অনীহা চলে আসে। যার কারনে আমরা শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে শক্তি পাইনা। এরকম সমস্যা হলে নিয়মিত তোকমার জুস খেতে পারেন।
- পুরুষের টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি করে: তোকমা খাওয়ার ফলে পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া তোকমায় থাকা ফাটি অ্যাসিড যা পুরুষদের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পুরুষরা তাদের শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি অনুভব করে।
- শরীর ঠান্ডা রাখে: গ্রীষ্মকালের গরমে আমরা অনেকেই অস্বস্তি ভোগ করি। এই গরমের কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘাম বের হয়ে যায়। এতে করে শরীরে দুর্বলতা দেখা দেয়। এ দূর্বলতা থেকে রক্ষা পেতে গ্রীষ্মকালে তোকমার জুস বানিয়ে খাওয়া উত্তম। জুসের সাথে সামান্য পরিমাণ চিনি বা লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
- মাড়ি ও দাঁতের সুরক্ষা: ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও ফসফরাস জাতীয় উপাদান আমাদের মাড়ি ও দাঁতকে সুরক্ষা করে। মাড়ি শক্ত রাখা ও দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা সম্মুখীন হলে নিয়মিত তোকমা খেলে ভালো হওয়া যায়।
তোকমা দানা আরো অনেক ভাবে আমাদের শরীরে উপকারে আসে। পেটের ভিতর প্রদাহ হলে,
ক্যান্সারের কোর্স ধ্বংস সাহায্য করার মত অনেক বড় বড় সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া
যাবে শুধুমাত্র তোকমা দানা খাওয়ার কারণে। তাই দৈনন্দিন জীবনে সকল খাবারের
পাশাপাশি তকমা দানার শরবত বা বিভিন্ন ডেজার্ট বানিয়ে খেলে শরীরের বিভিন্ন উপকারে
আসবে।
তোকমা দানার অপকারী দিকসমূহ:
তোকমা দানা যেমন আমাদের অনেক উপকারে আসে তেমনি অপকারও করতে পারে। অতিরিক্ত তোকমা
খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। চলুন তাহলে তোকমা দানার
উপকারী দিকসমূহ নিয়ে আলোচনা করা যাক।
এলার্জি সমস্যা বেড়ে যায়
অতিরিক্ত তোকমা দানা খাওয়ার ফলে শরীরে এলার্জির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। আমরা কি
জানি?বীজ জাতীয় খাবারের মধ্যে এলার্জি প্রচুর পরিমাণে থাকে। তাই যারা এলার্জি
সমস্যায় ভুগছেন তারা অবশ্যই তোকমা এড়িয়ে চলবেন।
আরো পড়ুন;লবঙ্গ (clove) এর অপকারিতা
তবে যাদের একই সাথে কোলেস্টেরল ও এলার্জি সমস্যা থাকে তারা পরিমাণ মতো তোকমা দানা
খেতে পারেন। তোকমা দানা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তাই কোলেস্টেরল কমাতে
গিয়ে তোকমা খাওয়ার ফলে বেড়ে যেতে পারে এলার্জির সমস্যা। অবশ্যই খাওয়ার সময়
পরিমাণমতো খাওয়া উত্তম।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর
গর্ভবতী মহিলারা সবসময় উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণীয় উপযোগী হয়ে ওঠে না।
তোকমা একটি উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার। উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার হওয়ার কারণে সকল
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি ক্ষতিকর দিক বয়ে আনতে পারে। তাই গর্ভবতী মহিলাদের
খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।
ওজন বৃদ্ধি করে
নিয়মিত তোকমা খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে। তাই যারা ডায়েট করে থাকেন তারা
তোকমা পরিমাণ মতো খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
এই সকল সমস্যা ব্যতীত তোকমা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আরও অনেক সমস্যা দেখা দিতে
পারে। তোকমা খাওয়ার ফলে রক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে। যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা
আছে তাদের গ্যাস্ট্রিকের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই তোকমা খাওয়ার সময় অবশ্যই
খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত না হয়ে যায়।
পরিশেষে
উপরোক্ত উপকারিতা ও অপকারিতা মাথায় রেখে পর্যাপ্ত পরিমাণে তোকমা খাওয়ার অভ্যাস
গড়ে তুলুন। এতে করে শরীরের নানা রকম সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন। তোকমা খাওয়ার
নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে সকলকে জানাতে পোস্টটি শেয়ার করুন। আরো অনেক তথ্য পেতে
www.twestinfo.com চোখ রাখুন।
টুইস্ট ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্টের উত্তর দেয়া হয়।
comment url