ব্লুবেরি চাষ করে লাখ টাকা ইনকাম

পেপিনোমেলন চাষ করে সফল চাষি প্রিয় পাঠক আপনি কি ব্লুবেরি ফল সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। ব্লুবেরি চাষ করে লাখ টাকা ইনকাম করছে বাংলাদেশের প্রায় অনেক কৃষক।তাই ব্লুবেরি চাষ পদ্ধতি, ব্লুবেরি গাছের পরিচর্যা, ব্লুবেরি ফলের গাছ কোথায় পাওয়া যায়, ব্লুবেরি ফলের দাম, উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আজকের এই পোস্ট লিখা।
ব্লুবেরি চাষ করে লাখ টাকা ইনকাম
ব্লুবেরি চাষ করে লাখ টাকা ইনকাম করতে চাইলে অবশ্যই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন।
সূচিপত্রঃ ব্লুবেরি চাষ করে লাখ টাকা ইনকাম

ভূমিকা

বাংলাদেশের বেশিরভাগ কৃষকরা এখন ঐতিহ্যবাহী চাষ ছেড়ে বিভিন্ন ধরনের বিদেশি ফলের চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তার মধ্যে ব্লুবেরি অন্যতম। এ সকল বিদেশি ফলের চাষের কারণে তাদের মুনাফা ও বেড়ে গেছে।
বিভিন্ন রিসার্চ এর মাধ্যমে জানা যায় প্রতি একরে ব্লুবেরি চাষ করে মাসের ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা যাচ্ছে। এই ফলের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। অতীতে এই ফলের চাষ তেমন করা হতো না কিন্তু বর্তমানকালে মুনাফার পরিমাণ বেশি বলে বহু চাষিরা এই ফল চাষের দিকে ঝুকছেন।

ব্লুবেরি ফল কি ও এর উৎপত্তিস্থল

ব্লুবেরি একটি নীল বা বেগুনি রং এর ফল। এটি উত্তর আমেরিকার বাণিজ্যিক ফল। এর প্রচলন ঘটে ইউরোপের হাইব্রুশ শহরে। ব্লুবেরি উদ্ভিদের উচ্চতা প্রায় ১০ সেন্টিমিটার থেকে ৪ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। ব্লুবেরি মাটিতে জন্মানো এক ধরনের গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।এই ফল বাণিজ্যিকভাবে উত্তর আমেরিকা থেকে আসে।
তাছাড়া অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ নিউজিল্যান্ড এর চাষ করা হয়। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় বিভিন্ন দেশে এই ফলের চাষ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, ওয়াশিংটন ,মেক্সিকো ,পোলেন্ড, জার্মানি, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশেও উৎপাদন করা হয়। এই ফল দেখতে নীল রংয়ের বা গাড় বেগুনি বর্ণের হয়ে থাকে। রংয়ের ওপর বিশেষত্ব রেখে এর নাম ব্লুবেরি রাখা হয়।

ব্লুবেরি চাষ পদ্ধতি

বিদেশি ফল হলেও ব্লুবেরি চাষ পদ্ধতি খুবই সহজ। এই ফল চাষের বড় সুবিধা হল বারবার চারা রোপন করতে হয় না। একবার রোপনে প্রায় ১০ বছর ফল পাওয়া যায়। আবহাওয়া ও পরিবেশ ভালো থাকলে ভালো ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।এরা প্রচুর সূর্যের আলো পছন্দ করে। পর্যাপ্ত সূর্যের আলো ফেলে ভালো ফলন হয় এবং রোগ কম হয়। ব্লুবেরি ফলের গাছ ঝোপ আকারের হয়। শক্ত কান্ড ও ডাটা না থাকায় একে গুল্ম উদ্ভিদ বলা হয়। আকর্ষণীয় রং সুগন্ধ ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ব্লু বেরি ফল সকলের কাছেই জনপ্রিয়। চলুন তাহলে ব্লুবেরি ফলের চাষ পদ্ধতি জেনে নেয়া যাক:
  • মাটি ও জলবায়ুঃ ভালো ফলন পাওয়ার জন্য অবশ্যই মাটির ও জলবায়ু ঠিক রাখতে হবে। এ ফল হালকা শীতকালীন সময়ে হয়ে থাকে। ব্লুবেরি চাষ করার জন্য অবশ্যই উর্বর মাটি হতে হবে। কর্দমাক্ত মাটিতে চাষ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • জমি প্রস্তুত করা: ব্লুবেরি এর চারা রোপনের পূর্বে জমি ভালোভাবে চাষ করতে হবে এবং জমিতে এক ফুট গভীরে চারা রোপন করতে হবে। মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সার ব্যবহার করতে হবে। আশ্বিন মাস এর চারা রোপনের সর্বোত্তম সময়। তাছাড়া নভেম্বর অডিসেম্বর মাসেও ব্লুবেরি চারা রোপন করা যায়।
  • রোপন পদ্ধতি: ব্লুবেরি চারা রোপন করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কতটুকু দূরত্বে চারা রোপন করা হচ্ছে। প্রতিটি চারার মাঝে এক থেকে দেড় ফুট দূরত্ব রাখতে হবে। যারা ক্রয় করার পূর্বে প্রতিটি চারাতে কোন রোগ বা পোকার আক্রমণ আছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। কারণ একটি ছাড়াতে পোকার আক্রমণ থাকলে তার সমস্ত জমিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ব্লুবেরি গাছ অতিরিক্ত পানি সহনশীল নয়। তাই অতিরিক্ত পানি ও বৃষ্টির পানি থেকে গাছ রক্ষা করার জন্য পলিথিন ব্যবহার করতে হবে। সার ব্যবহার করার পূর্বে খেয়াল রাখতে হবে যে নাইট্রোজেন জাতীয় সার মাত্রা অতিরিক্ত না হয়। এতে করে গাছের পাতায় বাদামি ঝোপ দেখা দিতে পারে যা গাছের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

ব্লুবেরি গাছের পরিচর্যা

ব্লুবেরি চাষ পদ্ধতি শেষ করার পর এর পরিচর্যা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ব্লুবেরি গাছের পরিচর্যা করতে তেমন কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না। ব্লুবেরি চাষ করার পর যদি এটি মাত্র অতিরিক্ত সূর্যালোকের মধ্যে থাকে তাহলে ঘন ঘন এর গাছে স্প্রে করতে হবে। মাটির উর্বরতা রক্ষা করার জন্য এতে বিশেষ সার প্রয়োগ করতে হবে।

এর জন্য বিশেষ কিছু খনিজ সার ব্যবহার করতে হয় যেমন ব্লুবেরি লিফট ড্রিপ্ট। এর ফলন সাধারণত মেয়ে মাসের প্রথম দিকে ও জুনের মাঝামাঝি সময় হয়। গাছ থেকে ব্লু বেরি ফল তোলার পর পরবর্তী ফল ধরার আগে গাছের বিশেষ পরিচর্যা করতে হয়।

নিয়মিত পরিচর্যা না করা হলে পরবর্তীতে গাছে কোন রকম ফল ধরে না। একবার ফল ধরার পর পুরনো শাখা গুলো কেটে দেওয়া উত্তম। এ ফলের গাছ ঝোপ আকারে হয়ে থাকে তাই মাঝে মাঝে ঝোপ সারিয়ে ডাল পরিষ্কার করে দিতে হয়। ব্লুবেরি গাছে সার হিসেবে পাখির বিষ্ঠা ব্যবহার করা যায়। ভালো ফলন হওয়ার জন্য নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করতে হবে।

ব্লুবেরি ফলের দাম

বর্তমান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন দিক থেকে পরিবর্তনের পরিলক্ষিত হয়। তেমনি চাষাবাদের দিকেও ঘটছে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কৃষকরা ও নিত্য নতুন চাষের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। এতে তারা যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি বিভিন্ন প্রসঙ্গ উপস্থিত করছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে এখন কৃষকরাও হয়ে উঠছে উদ্যোগী।

বিভিন্ন বিদেশি ফল যেমন ড্রাগন ফল, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, মালবেরি ইত্যাদি ফলের চাষ করে যেমন দেশের উন্নতি সাধন করছে তেমনি তারা আর্থিকভাবেও সচল হচ্ছে। তেমনি বিদেশি ফল ব্লুবেরি চাষ করেও বর্তমানে কৃষকরা যেমন দেশের উন্নতি সাধন করছে তেমনি বিপুল পরিমাণ এর অর্থ উপার্জন করতে পারছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্লুবেরি চাষ শুরু করা হয়েছে। বিদেশি ফল হিসেবে দেশে এই ফলের দাম অনেক বেশি। প্রতি কেজি প্রায় ১০০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। তাছাড়া মার্কেট ভেদে এর দাম বেশি হয়ে থাকে। বিদেশি ফল হিসেবে এর চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। চাহিদা থাকার কারণে কৃষকরা হয়ে উঠছে সাফল্য।

ব্লুবেরি ফলের গাছ কোথায় পাওয়া যায়

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এখন ব্লুবেরি চাষ শুরু হয়েছে। চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এখন বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ব্লুবেরি ফলের গাছ বিক্রি করা হয়। দারাজ হল এর মধ্যে একটি সামাজিক মাধ্যম। দ্বারা যে প্রতি পীর গাছের দাম প্রায় ৬০ টাকা রাখে।

এই ফলের চাষ করার জন্য আপনি দারাজ থেকে কাজ ক্রয় করতে পারবেন। তাছাড়াও ফেসবুকে অনেক নার্সারি ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে ব্লুবেরি ফলসহ নানা ধরনের ফলের গাছ বিক্রি করা হয়। সে সকল সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সার্চ করে আপনি সেখান থেকে গাছ ক্রয় করতে পারবেন।

ব্লুবেরি ফলের উপকারিতা

বিভিন্ন ধরনের ফল আমাদের শরীরে বিভিন্ন উপকারে আসে। তেমনি ব্লুবেরি ফল আমাদের শরীরের অনেক উপকারে আসে। প্রতিদিন সকালে গ্রুপে খেলে বিভিন্ন রোগের ফাঁদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ব্লুবেরি ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের বিভিন্ন প্রদাহকে কমিয়ে দেয়। তাছাড়া ব্লু বেরি ফল খাওয়ার ফলে হার্টের রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ ফলের আরো অনেক উপকার রয়েছে তা নিম্নরূপ:
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:যারা উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য ব্লুবেরি ফল অত্যন্ত উপকারী। ব্লুবেরি ফল খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপের কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে ব্লুবেরি ফল এর জুস তৈরি করে খেতে পারেন।
  • ক্যান্সার কমায়:ব্লুবেরি ফলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। এ ফল খাওয়ার কারণে শরীরের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: ব্লুবেরিতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন যার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত ব্লুবেরি খেতে পারেন এতে করে আপনার শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
এছাড়া ব্লুবেরি আরো অনেক উপকারে আসে। এ ফল মস্তিষ্কের বিভিন্ন ক্ষয় রোধ করে থাকে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নতি করে। ব্লুবেরিতে বিভিন্ন প্রোটিন আছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। ব্লুবেরি ফলের উপকারিতা মাথায় রেখে আমাদের নিয়মিত ব্লুবেরি ফল খেতে উৎসাহিত করে।

লেখকের মন্তব্য

বাংলাদেশী কৃষকরা বিভিন্ন বিদেশি ফল চাষের মাধ্যমে গুণে নিচ্ছে তাদের সাফল্য। তাই আপনিও এই সাফল্যের ধার কাছে পৌঁছাতে ব্লুবেরির মতো ফল চাষ করতে পারেন। আশা করি এই সাফল্যে পৌঁছাতে আমার ব্লুবেরি চাষ পদ্ধতি পোস্টটি আপনাকে সাহায্য করবে।

তাই সকলকে এই সাফল্যে পৌঁছাতে ব্লুবেরি চাষ পদ্ধতি পোস্টটি সকলকে শেয়ার করুন। কমেন্টের মাধ্যমে আপনাদের মতামত জানান। এরকম আরো অনেক তথ্য পেতে www.twestinfo.com চোখ রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টুইস্ট ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্টের উত্তর দেয়া হয়।

comment url