ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত
ভারতের দর্শনীয় স্থানের ভ্রমণ গাইড উচ্চ চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ইন্ডিয়াকে সর্বপ্রথম স্থানে রাখে। তাই আজকের পোস্টে ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ সম্পর্কে আলোচনা করব।
অতি সহজে কিভাবে ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা করা যায় এবং আবেদনের ফি দেওয়ার সময়
যেন কোন ভন্ড লোকের কাছে না পড়তে হয় সেই সম্পর্কে জানতে অবশ্যই সম্পূর্ণ
পোস্টটি পড়ুন।
সূচিপত্রঃ
ভূমিকা
বিশ্বব্যাপী সকল দেশ ভারতকে একটি মেডিকেল হাব হিসেবে মনে করে। ভালো চিকিৎসার জন্য
সবাই ইন্ডিয়াকে বাছাই করে নেয়।এর জন্য ইন্ডিয়ান সরকার নতুন একটি ভিসা সার্ভিস
চালু করেছে যা আমরা মেডিকেল ভিসা হিসেবে চিনে থাকি। মেডিকেল ভিসার সার্ভিস শুধু
তারাই নিতে পারবে যারা সরকার স্বীকৃত হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রযোজ্য। মেডিকেল
ভিসা দুই ধরনের হয়ে থাকে।
- মেডিকেল ভিসা
- মেডিকেল ই ভিসা
সকলেই মেডিকেল ই ভিসাতে আবেদন করার যোগ্য নয়। ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসার সকল
প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে নিচের পয়েন্ট গুলো ভালো করে পড়ুন।
ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
মেডিকেল ভিসা সার্ভিসটি নেয়ার জন্য কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। ইন্ডিয়ান
মেডিকেল ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিম্নরূপ:
- পাসপোর্ট এর ফটোকপি।
- জাতীয় পরিচয়পত্রে ফটোকপি ও জন্ম নিবন্ধন ফটোকপি (১৮ বছরের কম হলে)।
- ডলার এনরোসমেন্ট অর্থাৎ ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
- ভিসা আবেদনের ফরম এর প্রিন্ট আউট।
- সাম্প্রতিক পাসপোর্ট আকারের ছবি।
- ছয় মাসের বৈধতা ও দুইটি ফাঁকা পৃষ্ঠা যুক্ত পাসপোর্ট।
- স্থায়ী বা আবাসিক ঠিকানার সত্যায়িত কপি।
- দেশ থেকে চিকিৎসা নদী চিকিৎসার জন্য একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্র সুপারিশ।
- পরিচালকের পাসপোর্ট কপি।
- পরিচালক সঙ্গে সম্পর্কের প্রমাণ।
- ডাক্তার থেকে মেডিকেল রিপোর্টের মূল কপি।
ভিসা আবেদনের পর উল্লেখিত সকল কাগজপত্র আবেদনকারীর উপস্থিতির মাধ্যমে আইভিসি তে
জমা করা। অবশ্যই সকল কাগজপত্র অরজিনাল হতে হবে। কাগজপত্রে কোন প্রকার সমস্যা বা
ভুল কিছু দেয়া থাকলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা হারাতে পারেন।
মেডিকেল ভিসার কাগজপত্র সাজানোর নিয়ম
প্রথমে অনলাইনে আবেদন ফরম রাখতে হবে। এরপর জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি বা জন্ম
নিবন্ধন ফটোকপি (১৮ বছরের কম হলে)। ইউটিলিটি বিল এর ফটোকপি (গত তিন মাসের মধ্যে
রয়েছে এমন বিল)।এরপর সংযুক্ত করতে হবে ব্যাংক স্টেটমেন্ট অর্থাৎ ডলার
এন্ডোসমেন্ট ।
অবশ্যই আপনাকে ৮০ থেকে ১৫০ মার্কিন ডলার রুপি এন্ডোসমেন্ট করতে হবে। এরপর পেশাগত
প্রমাণ সহ কাগজের ফটোকপি। ভারতীয় হাসপাতালের তারিখসহ এপয়েন্টমেন্ট লেটার। তারপর
সদ্য মেডিকেলের কাগজের সমূহের ফটোকপি ও তারপর সংযুক্ত করতে হবে পাসপোর্ট বইয়ের
ফটোকপি।সবশেষে ২×২ সাইজের শদ্য তোলা ছবি এটি ফরমের ডান পাশে ছবির ঘরে আঠা দিয়ে
লাগাতে হবে।
ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা করার নিয়ম
সকল কাগজপত্র কালেক্ট করার পর ভিসা আবেদনের জন্য যেতে হবে। ইন্ডিয়ান মেডিকেল
ভিসা করার নিয়ম আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। অনেক সময় মনে হয় ইন্ডিয়ান মেডিকেল
ভিসা করতে বুঝি অনেক সমস্যা পোহাতে হয়। আসলে এটি অতি সহজ একটি কাজ। প্রথমেই ভিসা
আবেদনের ফরম পূরণ করতে হবে।
সকল সঠিক তথ্য দিয়ে ফর্মটি পূরণ করার পর আবেদনের কাগজের একটি প্রিন্ট কপি নিতে
হবে। উপরোক্ত তালিকা থেকে সমস্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে। আবেদনকারীকে তার দেশের
কাছাকাছি ভারতের পরিদর্শন করতে হবে। কাগজপত্র আবেদন ফ্রম এর সাথে জমা দিতে হবে।
জমা দেওয়ার জন্য যার যার জেলা অনুযায়ী আইভিএসি সেন্টারে যেতে হবে।
অবশ্যই আবেদনকারী অর্থাৎ যে চিকিৎসা গ্রহণে যেতে ইচ্ছুক তাকে স্বশরীরে ফর্ম জমা
দিতে হবে। ফর্ম জমা দেওয়ার পর ১৫ থেকে ২০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। ১৫ থেকে ২০ দিন
পর আবেদন ফরমে দেয়া ফোন নাম্বারে ভিসার মেসেজ আসবে।
তারপর পাসপোর্ট সংগ্রহ করার পর ভিসা পেলে ফ্লাইট নির্ধারণ করতে হবে। উক্ত নিয়ম
মেনে আপনি ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা করার জন্য আবেদন করতে পারেন। আবেদন করার সময়
অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোন ভন্ড লোকের পাল্লায় না পড়েন।
ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা করতে কত টাকা লাগে
অনেকের মেডিকেল ভিসার খরচ সম্পর্কে ধারণা নেই। তারা মনে করে মেডিকেল ভিসা করতে
বুঝি প্রচুর অর্থ খরচ হয়। আসলে টুরিস্ট ভিসার মতোই মেডিকেল ভিসার প্রসেসিং ফ্রি
৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। এটি ব্যাংক একাউন্ট ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ড ও বিকাশ দিয়েও
পরিশোধ করা যায়। তাছাড়া সরাসরি আইভিএসি গিয়েও জমা করা যায়।
তবে অনেকেই ফ্রি পরিশোধ করার সময় বিভিন্ন ভন্ডের খপ্পরে পড়ে মাত্রা অতিরিক্ত
টাকা পরিশোধ করে। ইন্ডিয়ান ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টার থেকে সরাসরি বলা হয়েছে
মেডিকেল ভিসার জন্য ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার বেশি পরিশোধ করার কথা বললে তার প্রতি
আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
ইন্ডিয়ান কোন ভিসা করার জন্য এক্সট্রা কোন টাকা পরিশোধ করার কথা বলা হয়নি।
ইন্ডিয়ান ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টার থেকে অফিসার সেজে আবেদনকারীদের ফোনের মাধ্যমে ও
মাত্রা অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে অনেক ভন্ডই আবেদনকারীদের সুযোগ নিচ্ছে। এরকম
হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা আবেদনের জন্য যোগ্যতা
ইন্ডিয়া থেকে কোন প্রকার ভিসা দেওয়ার পূর্বে তারা আবেদনকারী সকল তথ্য
যাচাই-বাছাই করে থাকে। কাগজপত্রের সঠিক তথ্য না পেলে তারা ভিসা রিজেক্ট করে থাকে।
তেমনি ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা আবেদনের জন্য যোগ্যতা থাকতে হবে। যোগ্যতা সম্পর্কে
জানতে অবশ্যই নিচের পয়েন্ট গুলো লক্ষ্য করুন:
- আবেদনকারীকে অবশ্যই দেখাতে হবে যে তিনি ভারতেরই সরকার দ্বারা স্বীকৃত বা প্রতিষ্ঠিত বিশেষ হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা নিতে চান
- আবেদনকারীকে অবশ্যই তার স্থানীয় দেশের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা পরামর্শ নিতে হবে ও ইন্ডিয়ার যেকোনো চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ভিসা প্রয়োগের আগে স্থানীয় দেশে বিশেষ চিকিৎসা করতে হবে।
- আবেদনকারীর অবশ্যই রিটার্ন টিকেট এবং চিকিৎসার সাথে সামঞ্জস্য সমস্ত খরচের জন্য আর্থিক স্থায়ীভাবে আস্থা রাখতে হবে।
- বিশেষ কোন রোগ যেমন অঙ্গ প্রতিস্থাপন, নিউরো সার্জারি, কার্ডিয়াক রোগ ইত্যাদি মত বিশেষ রোগের চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ভিসার আবেদন করতে পারবে।
এ সকল শর্ত পূরণের মাধ্যমে একজন নাগরিক উচ্চ চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া মেডিকেল
ভিসার আবেদন করতে পারবেন। ভিসা আবেদন করার পূর্বে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে
ইন্ডিয়ান ভিসা আবেদনের জন্য যোগ্যতা রয়েছে কিনা।
মেডিকেল ভিসা পেতে কতদিন লাগে
ইন্ডিয়ান অন্যান্য ভিসা পেতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিন বা এক মাস ও লেগে থাকে।
কিন্তু মেডিকেল ভিসার ক্ষেত্রে এমনটা নয়। জরুরী ক্ষেত্রে মেডিকেল ভিসার পেতে
প্রায় ৭২ ঘন্টা সময় লাগে। শারীরিক অবস্থা ও গুরুতর মেডিকেলে ভর্তির জন্য
রোগীদের উপস্থিতির কোন প্রকার জোর করা হয় না। রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করে
মেডিকেল ভিসা করার সময় নিয়ে থাকে। গুরুতর অবস্থার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৭২ ঘণ্টা
সময় নিয়ে থাকে।
সর্বশেষ কথা
বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী এশিয়া মহাদেশ হিসেবে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশী মানুষের
বরাবরই প্রথম পছন্দ ইন্ডিয়া। প্রতিবছর অনেক বাংলাদেশী চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া
ভ্রমণ করে। ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নিয়ম এবং আরো
সকল তথ্য পেয়ে আশা করি আমার পোস্টটি সকলের অনেক সাহায্য করবে।
ইন্ডিয়ান মেডিকেল ভিসা সম্পর্কে সকলকে সঠিক ধারণা দিতে অবশ্যই আমার পোস্টটি
শেয়ার করুন। কমেন্ট করে অবশ্যই আপনাদের মতামত জানাবেন। আরো অনেক বিষয়ে তথ্য
পেতে www.twestinfo.com পেজে
লাইক ফলো ও কমেন্ট করে সাথে থাকুন।
টুইস্ট ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্টের উত্তর দেয়া হয়।
comment url