ব্রাজিল বাদাম কি? ব্রাজিল বাদামের উপকারিতা জানুন
তোকমা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা প্রিয় পাঠক আপনি কি ব্রাজিল বাদাম কি? ব্রাজিল বাদামের উপকারিতা, ব্রাজিল বাদামের পুষ্টিগুণ এবং ব্রাজিল বাদাম সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। এই পোস্টে ব্রাজিল বাদাম সম্পর্কে সকল তথ্য দেয়া রয়েছে।
ব্রাজিল বাদাম সম্পর্কে জানতে অবশ্যই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন। আশা করি ব্রাজিল
বাদাম সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা দিতে পারব।
সূচিপত্র
ভূমিকা
আমরা সকলেই অনেক রকম বাদামের সাথে পরিচিত। যেমন: কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা
বাদাম, চিনা বাদাম ইত্যাদি। কিন্তু আমরা ব্রাজিল বাদাম এর সাথে তেমন পরিচিত নই।এ
বাদামের নাম শুনলে মনে হতে পারে যে এটা কেমন বাদাম? আর কেমনি বা এই নাম?এরকম
প্রশ্নের উত্তর জানাতে আজকের এই প্রচেষ্টা মাত্র।এই পোস্টে আপনারা জানতে পারবেন
ব্রাজিল বাদাম কি? ব্রাজিল বাদামের উপকারিতা, পুষ্টিগুণ সহ আরো অনেক তথ্য।
ব্রাজিল বাদাম কি
ব্রাজিল বাদাম এক ধরনের বাদাম যা দক্ষিণ আমেরিকায় উৎপাদিত হয়। অ্যামাজন জঙ্গলের
বৃহত্তম ও দীর্ঘজীবী গাছের মধ্যে ব্রাজিল বাদাম গাছ হল একটি। এই বাদামের গাছ
প্রায় ৫০ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। এ বাদাম দেখতে অন্য সব বাদাম থেকে অনেকটাই
আলাদা।
আরো পড়ুন:পেপিনোমেলন ফল কি?
এ বাদাম বড় ও শক্ত এক গোলাকৃতির আবরণের ভিতরে থাকে যা কিছুটা নারিকেলের মত
দেখতে। এই শক্ত আবরণ কে ভেঙে ভিতরে ছোট ছোট ব্রাজিল বাদাম পাওয়া যায়। বাদামের
ওপর শক্ত আবরণের খোসা থাকে। খোসা ছাড়িয়ে ভিতরের অংশটুকু ব্রাজিল বাদাম বলা হয়।
এ বাদাম বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। ব্যবহারবিধি নিম্নরূপ:
- ব্রাজিল বাদামকে বিভিন্ন সাবান ও সুগন্ধির জন্য ব্যবহার করাহয়।
- এই বাদামের তেল ঘড়িতে লুব্রিকেট হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- ব্রাজিল বাদামের খোসা থেকে কাঠ কয়লা পানি বিশুদ্ধ করতে ব্যবহার করা হয়।
- এই বাদামের খোসাকে ধাতু ও সিরামিকে পলিশ করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
- বিভিন্ন জুয়েলারি রুজের কাজেও ব্যবহার করা হয়।
ব্রাজিল বাদামের পুষ্টিগুণ
ব্রাজিল বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এর ভিটামিন মিনারেল ও খনিজ পদার্থ। এতে
রয়েছে ৩% পানি, ৬৬% চর্বি, ১২% কার্বোহাইড্রেট ও ১৫% প্রোটিন। তাছাড়া আরো
রয়েছে চর্বি জাতীয় বিভিন্ন উপাদান। যেমন: ২৪% মনোসাচুরেটেড, ১৬% স্যাচুরেটেড ও
24% পলি আন স্যাচুরেটেড।
আরো পড়ুন:লবঙ্গ (clove) এর পুষ্টিগুণ
বিশেষজ্ঞদের মতে ১০০ গ্রাম ব্রাজিল বাদামে প্রায় ৬০০ ক্যালোরি পাওয়া যায়। এই
বাদাম ফাইবার, থায়ামিন, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, ও জিংক
জাতীয় খনিজ পদার্থের সমাহার। এ বাদামের তেলে ও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ
পদার্থ। যেমন: ফাটি এসিড, লেনোলিক অ্যাসিড, বিটা সিটোস্টেরল ইত্যাদি।
ব্রাজিল বাদাম কোথায় পাওয়া যায়
আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি ব্রাজিল বাদাম একটি বিদেশী পণ্য। অ্যামাজন জঙ্গলের শহর
ব্রাজিল এই বাদামের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র। ব্রাজিল শহর থেকে ব্রাজিল বাদাম ও
আরো অনেক দ্রব্য রপ্তানি করা হয়। যেমন কালো মরিচ, পাট, কাট, রবার ইত্যাদি।মূলত
বলা যায় যে এ বাদামের উৎপত্তি ব্রাজিল থেকে হয়েছে তাই একে ব্রাজিল বাদাম বলা
হয় এবং এই বাদাম সরাসরি ব্রাজিল থেকে রপ্তানি হয়।
আরো পড়ুন:ব্লুবেরি ফলের গাছ কোথায় পাওয়া যায়
ব্রাজিলের সহ আরো কিছু জায়গায় এই বাদাম জন্মায়। যেমন: কলম্বিয়া, পেরু,
গিয়ানা, ভেনেজুয়েলা। এছাড়াও নিগ্রো, তপাজোস ও অ্যামাজন নদীতে এই বাদাম পাওয়া
যায়। বাংলাদেশের এখন বিভিন্ন উচ্চ মার্কেটগুলোতে এ বাদাম পাওয়া যায়। তাছাড়া
ই-কমার্স মার্কেট ও অনলাইন জগতের ফেসবুক মার্কেটিং থেকেও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এ
বাদাম বিক্রি করা হয়।
ব্রাজিল বাদামের উপকারিতা
ব্রাজিল বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। যা আমাদের শরীরের
বিভিন্নভাবে উপকার করে। নিয়মিত ভাবে ব্রাজিল বাদাম খেলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা
থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যেমন: ফুসফুস, খাদ্যনালী, ত্বক, যকৃত, মাথা, স্তন,
মুত্রাশয়, প্রটেস্ট ও ক্যান্সার। বিশেষ করে ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করতে এ বাদাম
বেশি খাওয়া হয়।
আরো পড়ুন:লবঙ্গ (clove) এর যত উপকারিতা
তাছাড়া দেহের চর্বি নিয়ন্ত্রণ করতে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে এই বাদাম
অনেক উপকার করে। চুল বৃদ্ধি করতে ও চুলের বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষ া করতে
ব্রাজিল বাদাম বিশেষ উপকারে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে ব্রাজিল বাদাম ক্যান্সার
প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এ বাদামে থাকা সালেনিয়াম যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে
সাহায্য করে। নিচে ব্রাজিল বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
থাইরয়েডের ঝুঁকি কমায়
ব্রাজিল বাদামে থাকা সেলেনিয়াম যা থাইরয়েড এর ক্যান্সার ও থাইরয়েড জনিত
বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা করে।যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত
ব্রাজিল বাদাম খেতে পারেন। এতে করে থাইরয়েডের সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন।
শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্রাজিল বাদামে এক ধরনের পদার্থ থাকে। এই পদার্থ
রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা হ্রাস করে। ইনসুলিনের মাত্রা রাস করার কারণে রক্তের
শর্করার পরিমাণ কমে যায়। যা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই
ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত এ বাদাম খেতে পারেন।
স্মরণশক্তি বৃদ্ধি
ব্রাজিল বাদামে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। যেমন ভিটামিন ই ,ভিটামিন বি,
ভিটামিন বি ৬। যা আমাদের মস্তিষ্কে স্বাস্থ্য ভালো রাখে। হে বাদাম খাওয়ার ফলে
আমাদের স্মরণশক্তি বৃদ্ধি হবে এবং অতিরিক্ত বদমেজাজ থেকে নিয়ন্ত্রণ রাখবে।
কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি
ব্রাজিল বাদামে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন পেশির কর্ম ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে। তাছাড়া বিভিন্ন পেশির ব্যথা ও ল্যাক্টিন অ্যাসিড জমা থেকেও বাধা
দেয়। তাই যারা শরীরে দুর্বলতা অনুভব করেন তারা ব্রাজিল বাদাম খেতে পারেন।
হাড়ের সুরক্ষা
এ বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। আমরা জানি যে
ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের বিভিন্ন হাড়ের জন্য অনেক
প্রয়োজনীয়। তাই নিয়মিত ব্রাজিল বাদাম খাওয়ার ফলে আমাদের হাড়ের ঘনত্ব বাড়বে
এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখবে।
ব্রাজিল বাদামের তেল
বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ব্রাজিল বাদামের তেল বানিয়ে ব্যবহার করা যায়। এই
বাদামের তেল আপনার শরীরের এবং চুলের জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত এই তেল ত্বক ও
চুলে ব্যবহার করলে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখতে পাবেন। যেমন:
- এটি ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বককে ময়শ্চারাইজার করে।
- ত্বকের শুষ্কতা দূর করে।
- ব্রণ কিংবা বয়সের ছাপ চেহারা থেকে দূর করে।
- ত্বকের কোষ গুলোকে স্থিতিস্থাপক করে।
- সূর্যের অতিবেগুনি রষ্ণী থেকে ত্বকে রক্ষা করবে।
- নিয়মিত চুলে ব্যবহার করার ফলে চুলের ফাটা দূর হবে।
- খুশকি ও চুল পড়া রোধ করবে।
- দ্রুত চুল লম্বা হবে।
- চুলকে সাইনি ও সুন্দর করে তুলবে।
দিনে কয়টি ব্রাজিল বাদাম খেতে হয়
যদিও ব্রাজিল বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ। তারপরও এ বাদাম পরিমিত
ভাবে খাওয়া উচিত। দিনে এক থেকে তিনটি বাদাম খেতে হবে। অপরিমিত ভাবে ব্রাজিল
বাদাম খেলে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন রকমের সমস্যা। ওজন বাড়া থেকে শুরু করে,
বিরক্তি, মাথা ঘোরা, নখ ভেঙে যাওয়া, হৃদপিণ্ড ও কিডনির ব্যর্থতাও হতে পারে।
তাই সকলকে দিনে এক থেকে তিনটি ব্রাজিল বাদাম খেতে হবে।
ব্রাজিল বাদাম খাওয়ার নিয়ম
ব্রাজিল বাদাম বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। অন্যান্য বাদামের মতো এটি খেতে পারেন।
কিন্তু যদি আপনার কাছে খালি বাদাম খাওয়া পছন্দ না হয় তাহলে আপনি এ বাদাম কে
বিভিন্নভাবে খেতে পারবেন। যেমন: ব্রাজিল বাদামের কুকি, কেক, ডেজার্ট এর সাথে
যুক্ত করে, পাস্তা কিংবা সালাতে যুক্ত করে ও এর জুস বানিয়েও খেতে পারবেন।
মন্তব্য
ব্রাজিল বাদাম বিভিন্ন পুষ্টিগুণ এর দিক থেকে আমাদের অনেক সুবিধা সরবরাহ করে।
যদিও আমাদের অনেক উপকারে আসে তারপরও এটি অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
কারণ অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে এই বাদাম উপকার থেকে উপকার বয়ে আনবে। আমাদের শরীরের
বিভিন্ন কাজে এই বাদাম দুর্দান্ত ঔষধি হিসেবে কাজ করে।
আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে। ব্রাজিল বাদাম সম্পর্কে সকলকে
জানাতে অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করুন। এবং আপনাদের মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানান।
আরো তথ্য পেতে www.twestinfo.com পেইজে চোখ রাখুন। লাইক ,কমেন্ট ও শেয়ার করে পাশে থাকুন।
টুইস্ট ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্টের উত্তর দেয়া হয়।
comment url