ত্বীন ফলের উপকারিতা ও ত্বীন ফল নিয়ে হাদিস

কিউই ফল এর উপকারিতা প্রিয় পাঠকগণ, আজকের আর্টিকেলে ত্বীন ফল কি,ত্বীন ফলের উপকারিতা,ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম,ত্বীন ফল কোথায় পাওয়া যায় ও ত্বীন ফলের দাম ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হবে।আপনারা যারা ত্বীন ফল সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করছেন তারা এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।সম্পূর্ন আর্টিকেলটি পড়লে আপনি ত্বীন ফল নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ত্বীন ফলের উপকারিতা ও ত্বীন ফল নিয়ে হাদিস

সূচিপত্র:

ভূমিকা

ত্বীন ফল তো আমরা সবাই চিনি। এই ফলের উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে হয়তো আমাদের তেমন কোনো ধারণা নেই। মুসলিম ধর্মে ত্বীন ফলকে বরকতি ফল বলা হয়।ত্বীন ফল নিয়ে পবিত্র কোরআন শরীফে একটি সূরা নাযিল করা হয়েছে। এই ফল আমাদের অনেক উপকারে আসে। তাই আজকের আর্টিকেলে এই ফল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

ত্বীন ফল কি

ত্বীন ফলকে ডুমুর জাতীয় ফলের মতো বলা হয়। এ ফল আকারে একটু বড় এবং মিষ্টি ও রসালো। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে এই ফল চাষ করা হচ্ছে। এটি অত্যন্ত লাভজনক ভাবে চাষ করা হচ্ছে। হিন্দি ফার্সি ও মারাঠি ভাষায় এই ফলকে বলা হয় আন্ঞ্জির।
আর মুসলিম ধর্মে আরবি ভাষায় এর নাম ত্বীন। এই ফল মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে বেশি চাষ করা হয়। তবে ত্বীন ফলের আদি নিবাস ছিল মধ্যপ্রাচ্যে। এই ফল সাধারণত মরু অঞ্চলে ভালো জন্মে। তবে শুষ্ক ও শীত প্রধান দেশের মধ্যেও এই ফলের ভালো উৎপাদন করা সম্ভব।

ত্বীন ফলের পুষ্টিগুণ

ত্বীন ফলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও ভিটামিন রয়েছে। ত্বীন ‌ফলের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন মাজীদেও উল্লেখ করা রয়েছে। ত্বীন ফলে প্রচুর পরিমাণ এর ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম,   জিংক, কপার, আয়রন সহ আরো নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে।
এছাড়া এতে ক্যালোরির পরিমাণ রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু ত্বীন ফলে কোন প্রকার ফ্যাক্ট নেই যার কারণে ত্বীন ফল খাওয়ার পর মোটা হয়ে যাওয়ার কোন চিন্তা থাকে না।ত্বীন ফল খাওয়ার কারণে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে আমরা সহজেই রক্ষা পেতে পারবো। নিয়মিত একটি ত্বীন ফল খাওয়ার কারণে আপনার শরীরে অদম্য শক্তি অনুভূত হবে।

ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম

ত্বীন ফল খাওয়ার নিয়ম অত্যন্ত সহজ। অন্যান্য ফলের মতো আপনি এই ফলকেও খেতে পারবেন। প্রথমত ওপরের পাতলা চামড়া ফেলে দিয়ে ভেতরে নরম মাংসাশী অংশ খাওয়ার উপযোগী। ত্বীন ফল আপনি কাঁচা অবস্থায় রান্না করেও খেতে পারবেন। অনেকে আবার ত্বীন ফলকে সালাতের সাথে দিয়ে খেয়ে থাকে। এতে করে ত্বীন ফলের স্বাদ আরো বেড়ে যায়।
তাছাড়া ত্বীন ফল আপনি জুস বানিয়েও খেতে পারবেন। প্রথমত ত্বীন ফলকে ভালোভাবে ধুয়ে এঁকে চার ভাগে কেটে নিতে হবে। এরপর ব্লেন্ডারের সাহায্যে মধু বা চিনি দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে এর জুস বানিয়ে খেতে পারেন। আবার ত্বীন ফলকে ড্রাই ফুড হিসেবে ও খাওয়া যায়। প্রথমত ভালো করে ধুয়ে ত্বীন ফলকে ভালো মতো শুকিয়ে নিতে হবে।

তারপর একটি কাঁচের বোতলে ত্বীন ফলকে কেটে এর সাথে আরো অন্যান্য ড্রাই ফুড মিক্স করে এতে কিছু পরিমাণ মধু দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে আপনি ফ্রিজে রেখে অনেকদিন খেতে পারবেন। ড্রাই ফুড হিসেবে খেলে এর পুষ্টিগুণ অনেক বৃদ্ধি পায়।

ত্বীন ফল কোথায় পাওয়া যায়

ত্বীন ফল এখন বিশ্বের প্রায় অনেক রাষ্ট্রে পাওয়া যায় বিশেষ করে এই ফল ভারত নেপাল শ্রীলঙ্কা মায়ানমারেও পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ত্বীন ফলের চাষ চট্টগ্রাম সিলেট ময়মনসিংহ ঢাকা খুলনা ও বরিশাল বিভাগেও করা হয়। ত্বীন ফলকে এ সকল দেশে ঔষধি ফল হিসেবে বেশি চিনে। বাংলাদেশে অনেক সময় দিন ফলকে ভারত থেকে আমদানি করা হয়।
বাংলাদেশের ঢাকা জেলার গাজীপুরের শ্রীপুরে ত্বীন ফলের চাষ করা হয়। যেহেতু এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা চাষ শুরু হয়েছে। তাই বাংলাদেশের সকল জেলায় এই ফল কি পাওয়া যায়। আপনি যদি ত্বীন ফল কিনতে চান তাহলে বিভিন্ন ফলের দোকানে বা সুপার শপে পেয়ে যাবেন। তাছাড়া এই ফলকে এখন ড্রাই ফুড হিসেবে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেইজে পাওয়া যায়।

ত্বীন ফলের দাম কত?

ত্বীন ফল এখন মোটামুটি প্রায় সকল জেলায় পাওয়া যায়। আপনি যদি এটি কাঁচা কিনতে চান তাহলে এর দাম কেজিতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা হবে। আর ত্বীন ফল পাকা অবস্থায় ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি হয়ে থাকে। ত্বীন ফলকে আবার ড্রাই ফুড হিসেবেও বিক্রি করা হয়।
 যা শুকিয়ে একদম খাওয়ার উপযোগী করা হয়। ড্রাই ফুড হিসেবে কিনতে চাইলে এটি দাম একটু বেশি হবে। তখন কেজিতে ১ হাজার থেকে ২ হাজার পর্যন্ত দাম হয়ে থাকে। ত্বীন ফলকে আপনি যেভাবে খান না কেন এর পুষ্টিগুণ এর কোন কমতি হবে না। ত্বীনফল আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী একটি ফল।

ত্বীন ফলের উপকারিতা

ত্বীন ফলে প্রচুর পরিমাণ এর ভিটামিন থাকার কারণে এর উপকারিতা রয়েছে প্রচুর। চলুন তাহলেত্বীন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানা যাক।

চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: ত্বীন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এর ভিটামিন সি ভিটামিন ই ও ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের চুলের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ত্বীন ফল খাওয়ার ফলে চুল পড়া কমে যাবে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে একই সাথে চুল লম্বা ও ঘন করতে সাহায্য করে।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে: ত্বীন ফলের পুষ্টিগুণ এর মধ্যে আমরা জেনেছি ত্বীন ফলে প্রায় সকল ধরনের ভিটামিন রয়েছে। এ সকল ভিটামিন আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। ত্বীন ফল খাওয়ার ফলে ত্বকের ব্রণ ও ব্রণের সমস্যা থেকে রক্ষা করে তাছাড়া ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং বলিরেখা দূর করে।

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে: ত্বীন ফল খাওয়ার ফলে আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়।ত্বীন ফল বয়স্কদের ক্ষেত্রে একটু বেশি উপকারী। বয়স্ক হলে চোখের দৃষ্টি কমে যায় এবং বিভিন্ন ম্যাকুলার অবক্ষয় হয়। ত্বীন ফল খাওয়ার ফলে চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধির সাথে সাথে ম্যাকুলার অবক্ষয় রোধ করে।

হাড় শক্ত করে: ত্বীন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। এই ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের হাড়কে মজবুত করে এবং হারে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করে। ত্বীন ফল খাওয়ার ফলে বয়স্কদের হাড়ের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারবে।

যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে: পুরুষদের জন্যত্বীন ফলের উপকারিতা অপরিসীম। ত্বীন ফল খাওয়ার ফলে পুরুষদের যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: ত্বীন ফলে খনিজ পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পবিত্র কোরআন মাজীদেও এ ফলের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা আছে।

বেরিবেরি রোগ থেকে রক্ষা করে: ত্বীন ফল খাওয়ার ফলে শরীরে থায়ামিন এর অভাব পূরণ করে। যার ফলে বেরিবেরি রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে।

মেয়েদের মাসিকের সমস্যা সমাধান করে: পবিত্র কোরআন মাজিদে উল্লেখ করা আছে ত্বীন ফল খাওয়ার ফলে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর করে এবং মেয়েদের দ্রুত গর্ভপাত হতে সাহায্য করে।

মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে:ত্বীন ফলে রয়েছে ওমেগা থ্রি ওমেগা সিক্স। এই দুইটি উপাদান আমাদের মানসিক বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা করে। বর্তমানে অনেকেই ডিপ্রেশন ,স্মৃতি শক্তি হ্রাস ইত্যাদি সমস্যায় ভুগে। ত্বীন ফল খাওয়ার ফলে এ সকল সমস্যা থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যায়।

ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করে: আমরা জানি ডায়াবেটিস রোগীরা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে পারে না। মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে তাদের সুগার লেভেল বেড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ত্বীন ফলে প্রচুর পরিমাণে মধু রয়েছে এবং এটি মিষ্টি ফল হওয়ায় ডায়াবেটিসের রোগীদের মিষ্টির চাহিদা পূরণ করে এবং সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: নিয়মিত ত্বীন ফল খাওয়ার ফলে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এতে করে হৃদরোগ থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া যায়।

ওজন কমাতে সাহায্য করে: ত্বীন ফলে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট যা আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি নিষ্কাশন করে। যারা অতিরিক্ত চর্বির ভয়ে পেট ভরে খাবার খেতে পারেন না তাদের জন্য ত্বীন ফল একটি উপযুক্ত ফল যার মধ্যে ফ্যাট নেই বললেই চলে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: আমরা অনেকেই উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগি। তারা নিয়মিত ত্বীন ফল খেতে পারেন। ত্বীন ফল খাওয়ার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে।

শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে: আমাদের মধ্যে অনেকেই রিয়াজ মা বা শ্বাসকষ্ট রয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে যে ত্বীনফল খাওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

এক কথায় বলা যায় যে ত্বীন ফলের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। ত্বীন ফলকে পুষ্টিগুণের সমাহার বলা হয়।

ত্বীন ফল নিয়ে হাদিস

ত্বীন ফল নিয়ে পবিত্র কোরআনে একটি সূরা রয়েছে। সেই সূরায় বর্ণিত রয়েছে আল্লাহ তা'আলা ত্বীন ফলের নামের শপথ করেছেন। এবং আদম পিতা ও মাতা হাওয়া আল্লাহর আদেশে অমান্য করে উলঙ্গ হয়ে গেলে তখন তারা ত্বীন ফলের গাছের পাতা দিয়ে তাদের লজ্জা স্থান ঢেকে ছিলেন।
এবং আরো বলা আছে ত্বীন ফল একটি জান্নাতি ফল। এই ফলের বৃক্ষ জান্নাতেও রয়েছে। স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (স) সকলের মাঝে ত্বীন ফল বন্টন করে দিয়ে বলতেন এটি খাও কারণ এতে অনেক রোগের ঔষধ রয়েছে। পবিত্র কোরআন শরীফে ত্বীন সূরায় এই ত্বীন ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা রয়েছে।

মন্তব্য

ত্বীন ফল একটি পবিত্র ফল। ত্বীন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে পবিত্র কোরআন মাজিদেও উল্লেখ করা আছে।ত্বীন ফল খেলে আমরা বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাবো।তাই আমাদের উচিত নিয়মিত ত্বীন ফল খাওয়া।আশাকরি ত্বীন ফল সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত ধারনা দিতে পেরেছি।এরকম আরো‌ তথ্য পেতে www.twestinfo.com পেজে চোখ রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টুইস্ট ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্টের উত্তর দেয়া হয়।

comment url