ছাদে বা বাগানে ড্রাগন ফল চাষ করার পদ্ধতি

ব্লুবেরি চাষ করে লাখ টাকা ইনকাম প্রিয় পাঠক আপনি কি ছাদে বা বাগানে ড্রাগন ফল চাষ করার পদ্ধতি, ড্রাগন ফল গাছের পরিচর্যা, ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।ড্রাগন ফল সম্পর্কে বিস্তারিত এই আর্টিকেলে বর্ণনা করা আছে। এই ফল সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে অবশ্যই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
ছাদে বা বাগানে ড্রাগন ফল চাষ করার পদ্ধতি

ভূমিকা

বর্তমানে ড্রাগন ফল আমাদের একটি পরিচিত ও আলোচিত ফল। বিদেশি ফল বলে আমাদের দেশে সকলেরই এই ফল খাওয়ার এবং চাষ করার অনেক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে এমন অনেক চাষী ড্রাগন ফল চাষ করে বর্তমানে প্রচুর টাকা ইনকাম করছে। তাছাড়া এখন বিভিন্ন বাসার ছাদে বা বাগানে ড্রাগন ফল চাষ দেখা যাচ্ছে। তাই এই ফল চাষ পদ্ধতি ও এই ফলের অনেক তথ্য নিয়ে আজকের এই আর্টিকেল।

ড্রাগন ফল পরিচিতি

ড্রাগন ফল এটি বিদেশি ফল। যার প্রথম আমেরিকায় উৎপাদন করা হয়। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় এর চাষ শুরু হয়েছে। ড্রাগন ফলের গাছ দেখতে অনেকটা কেকটাসের মত। এই গাছের দেহে জুড়ে কোন পাতা নেই রয়েছে শুধু কাটা। এ ফলের গাছ তেমন লম্বা হয় না তবে অনেক ঝোপটালো হয়। এ ফল ওজনের প্রায় ১৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম হয়ে থাকে। ড্রাগন ফল তিন প্রজাতির হয়। যেমন:
  • কোস্টারিকা ড্রাগন ফল
  • হলুদ রঙের ড্রাগন ফল
  • লাল রঙের ড্রাগন ফল

ছাদে বা বাগানে ড্রাগন ফল চাষ করার পদ্ধতি

ড্রাগন এমন একটি ফল যা বাগানে বা ছাদে চাষ করা যায় এবং ভালো ফলন ও পাওয়া যায়। এই ফল সারা বছরই চাষ করা যায়। তবে ভালো ফলন পেতে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে চারা রোপণ করতে হয়। ড্রাগন ফল চাষের জন্য জৈব সমৃদ্ধ বেলে বা দোয়াশ মাটি বেশি উপকারী। তবে চাইলে এটি সব ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়।
ড্রাগন ফলের গাছের কথা যদি বলা হয় তবে এটি একটি গাছ থেকে অসংখ্য গাছ তৈরি করা যায় শুধুমাত্র কাটিং লাগানোর মাধ্যমে। ছাদে বা বাগানে ড্রাগন ফলের কাটিং লাগানোর জন্য ২৫ বা ৩০ ইঞ্চির ড্রাম বা টপ ব্যবহার করতে পারেন। একটু চওড়া ও উঁচু ড্রাম বা টপ ব্যবহার করা উত্তম কারণ এ সকল ড্রামে গাছের শিকড় ভালোভাবে ছড়াতে পারবে এবং গাছের দ্রুত ফলন ধরবে।

ড্রাম বা টপ নির্ধারণ করার পূর্বে খেয়াল রাখতে হবে যাতে এতে পানি না জমে থাকে। পানি না জমার জন্য ড্রাম বা টপের নিচে কিছু ছিদ্র করে দিতে পারেন। বড় ছিদ্র হয়ে গেলে তা ইটের টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে।

মাটি প্রস্তুত করা: মাটি প্রস্তুত করতে লাগবে দোআঁশ মাটি, গোবর, টিএসপি সার ও পটাশ সার। নির্ধারিত পাত্রে তিন ভাগ বেলে দোআঁশ মাটি, দুই ভাগ গোবর, ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম টিএসপি সার ও ৪০ থেকে ৪৫ গ্রাম পটাশ সার মিশিয়ে মাটি দিয়ে পূর্ণ করতে হবে।
এমন ভাবে মাটি দিয়ে পূর্ণ করতে হবে যাতে টপ বা ড্রামের উপরে চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার জায়গা খালি থাকে। মাটি ভালোভাবে মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন রেখে দিতে হবে। মাঝে মাঝে মাটিগুলো আলগা করে দিতে হবে। অবশ্যই টবের মাটি ঝুরঝুরে হতে হবে। শক্ত মাটিতে গাছ লাগালে তার ফলন বা বৃদ্ধি ভালো হবে না।

চারা রোপন: মাটি ভালোভাবে প্রস্তুত করা হয়ে গেলে ড্রাগনের চারা বা কাটিং আনতে হবে। যারা ক্রয়ের পূর্বে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন সুস্থ ও রোগ মুক্ত হয়।তবে যারা লাগানোর জন্য ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার গর্ত করতে হবে। এ গর্তে গাছের কাটিং লাগাতে হবে।লাগানোর পর অবশ্যই আলতো হাতে চাপ দিতে হবে। যারা রোপনের পর দুই থেকে তিন দিন গাছে পানি দেওয়া যাবে না। কাটিং মাটিতে ভালোভাবে খাপ খাওইয়ে গেলে পানি দিতে হবে।

ড্রাগন ফল গাছের পরিচর্যা

গাছ লাগানোর পর অবশ্যই একে পর্যাপ্ত পরিচর্যা করতে হবে। ড্রাগন ফল গাছের সঠিক পরিচর্যা না করা হলে এর ফল ভালো হবে না। ড্রাগন গাছ কিছুটা ঝোপের লতার প্রকৃতির হয়ে থাকে। গাছের কান্ড কিছুটা বড় হয়ে গেলে অবশ্যই খুঁটি বা পিলারের সাহায্যে গাছকে বেঁধে দিতে হবে। তাছাড়া টায়ারের মাধ্যমে গোলাকৃতির করে গাছের কান্ডগুলো টায়ারের সাথে বেঁধে দেওয়া যায়।
এতে করে গাছের শক্তি পায় এবং ফলন বেশি হয়। নিয়মিত পরিদর্শন করতে হবে যে গাছে কোন আক্রান্ত শাখা হয়েছে কিনা। রোগা আক্রান্ত শাখা হলে অবশ্যই তা কেটে দিতে হবে। গাছের আশেপাশে আগাছা কেটে পরিষ্কার রাখতে হবে। ড্রাগন কেকটাস জাতীয় গাছ।

তাই ড্রাগন গাছে খুব কম পানি দিতে হয়। এবং এই গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকলে গাছ পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গাছ রোপনের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে রোদ উজ্জ্বল জায়গায় রোপন করা হয়েছে কিনা। সপ্তাহে গাছে একবার করে পানি দিতে হবে। উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে ড্রাগন গাছের ভালো ফলন পাওয়া যায়।

ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ

ড্রাগন ফলে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। ভিটামিন সি মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবার যুক্ত ফল ড্রাগন ফল। এই তাছাড়া রয়েছে ফ্যাট, ক্যারোটিন, ফসফরাস, এসকরবিক অ্যাসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদি। এতে রয়েছে আশি থেকে নব্বই গ্রাম পানি। প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে শরীরে ৯ থেকে ১০ গ্রাম শর্করা,০.৩৩ থেকে ০.৯০ গ্রাম আশ, ০.১৫-০.৫ গ্রাম প্রোটিন, ৬-১২ গ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৬-৩৫ গ্রাম ফসফরাস পাওয়া যায়।

ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম

ড্রাগন ফল দেখতে অনেক আকর্ষণীয়। এটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ফল। এটি খাওয়ার নিয়ম অনেক সহজ। ড্রাগন ফল খাওয়ার পূর্বে দেখতে হবে যে এটি খাওয়ার যোগ্য বা পাকা ফল কিনা। পাকা ফল দেখতে উজ্জ্বল লাল বা গোলাপি রঙের হয়ে থাকে।
এ ফল খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ওপরের পাতলা চামড়া ফেলে দিতে হবে। নিচের নরম মাংস খাওয়ার উপযোগী। এটিকে আপেলের মতো কেটে খাওয়া যায়। অন্যান্য ফলের মতো এটিকে কেটে সরাসরি খেতে পারবেন। তাছাড়া বিভিন্ন ডেজার্ট এর সাথে দিয়েও খাওয়া যায়। অনেকে আবার ড্রাগন ফলে জুস বানিয়েও খেতে পছন্দ করে।

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা

ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এর ভিটামিন। যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে দূরীকরণে ও স্বাস্থ্যের উপকার হিসেবে কাজ করে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা নিম্নরূপ:
  • ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণের ফাইবার যা আমাদের শরীরের হজম প্রক্রিয়া ভালো রাখেন। ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে বদ হজম এবং পেটের নানা সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। তাছাড়া এই ফলের ফাইবার আমাদের অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • ড্রাগন ফলে কয়েকটি এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যেমন: বিটালাইনস, হাইড্রোঅক্সিসিনামেটরস,ফ্ল্যাভোনয়েড। এ সকল এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের রক্তের লাল দানাদার অংশে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • ড্রাগন ফলে রয়েছে ভিটামিন সি। যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • ড্রাগণে বিদ্যমান আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের বিভিন্ন হাড়কে মজবুত করে। হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। যার ফলে হাতে ও পায়ে ব্যথা হ্রাস পায়।
  • ড্রাগনে কোন প্রকার ফ্যাট নেই যার ফলে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা থেকে বিরত থাকে। এই ফল খেলে আমাদের মোটা হওয়ার কোন চিন্তা থাকে না।

ড্রাগন ফলের অপকারিতা

ড্রাগন ফল খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি কিছু অপকারিতা রয়েছে। অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের শরীরের অতিরিক্ত মাত্রায় এলার্জি হতে পারে। তাই এলার্জির সমস্যা থাকলে ড্রাগন ফল পর্যাপ্ত পরিমাণের খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় পদার্থ রয়েছে।
তাই অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে উক্ত প্রোটিন আমাদের অন্তরে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এতে করে ডায়রিয়া জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই উপকারের দিক মাথায় রেখেও অপকারের কথা চিন্তা করে পরিমাণ মতো ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত।

মন্তব্য

বাংলাদেশে এখন বিভিন্ন জেলায় ড্রাগন ফল চাষ করে চাষিরা উন্নত জীবনযাপন করছেন। তাছাড়া অনেক জায়গায় বাসার ছাদে বা বাসার সামনে বাগানেও ড্রাগন ফল চাষ করতে দেখা যাচ্ছ। এই ফল চাষ করা মানুষের শখে পরিণত হয়েছে।

তাই আপনিও আপনার বাসার ছাদে বা বাগানে ড্রাগন ফল চাষ করতে পারেন। ছাদে বা বাগানে ড্রাগন ফল চাষ করার পদ্ধতি সম্পর্কে সকলকে জানাতে অবশ্যই আর্টিকেলটি শেয়ার করুন। আরো তথ্য পেতে www.twestinfo.com পেজে চোখ রাখুন। কমেন্ট করে আপনার মতামত প্রকাশ করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টুইস্ট ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্টের উত্তর দেয়া হয়।

comment url