বাংলাদেশের নতুন ফল পেপিনোমেলন চাষ করে সফল চাষি

মালবেরি চাষ পদ্ধতি জানলে সাফল্য নিশ্চিত বিদেশি ফল পেপিনোমেলন আমাদের সকলের কাছে অপরিচিত।বাংলাদেশের নতুন ফল পেপিনোমেলন চাষ বর্তমান কালে বেশ জনপ্রিয় ও লাভবান হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন জেলায় এই বিদেশি ফলের চাষ করা হচ্ছে।ইউটিউব দেখে বিভিন্ন জেলার চাষীরা এই ফলের চাষ করে থাকছেন। 
বাংলাদেশের নতুন ফল পেপিনোমেলন চাষ করে সফল চাষি
পেপিনোমেলন ফলের চাষ পদ্ধতি বা গাছের পরিচর্যা সম্পর্কে তেমন কারোরই ধারণা নেই। পেপিনোমেলন ফল সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে সম্পন্ন পোস্টটি পড়ুন এবং আপনিও এই ফল চাষ করে হয়ে উঠুন লাভবান সফল চাষি।

ভূমিকা

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা যেমন: যশোর, রংপুর, খুলনা এসকল জেলায় প্রায় বেশিরভাগ চাষিরাই পেপিনোমেলন ফল চাষ করছেন। তারা এই ফল চাষ করে যেমন লাভহানও হচ্ছেন তেমনি সফল চাষী হিসেবেও সকলের কাছে পরিচিতি লাভ করছেন।
সকলেই বলছেন যে বাংলাদেশের নতুন ফল পেপিনোমেলন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে। তাই আপনিও বাংলাদেশের নতুন ফল পেপিনোমেলন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে সাথে থাকুন।

পেপিনোমেলন ফল কি?

পেপিনোমেলন ফল একটি আমেরিকান ফল। এই ফলে রয়েছে অসংখ্য পুষ্টিগুণ। এটি খেতেও খুব সুস্বাদু।পেপিনোমেলন ফলের গাছ বহু বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এটি বারোমাসি জাতের হাইব্রিড গাছ।পেপিনোমেলন ফলে প্রায় ৯৩% পানি। এটি দক্ষিণ আমেরিকার মহাদেশের একটি সবুজ গাছের ফলষ। এই ফল কাঁচা ও খাওয়া যায়। প্যাপিনোমেলন পুষ্টি ও ঔষধি গুনাগুন সমৃদ্ধ একটি ফল যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

পেপিনোমেলন ফলের বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশের নতুন ফল পেপিনোমেলন চাষ ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই ফল চাষ করার পূর্বে জানতে হবে এই ফলের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য। তাই বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে নীচের পয়েন্ট গুলো লক্ষ্য করুন:
  • পেপিনোমেলন ফল আকর্ষণীয় র‌ঙের।
  • উচ্চ ফলনশীল এই ফলের দীর্ঘদিন ফলন পাওয়া যায়।
  • এই ফল উচ্চমাত্রায় ভাইরাস সহনশীলতায় দক্ষ।
  • সুস্বাদু ও পুষ্টি গুনে ভরপুর একটি ফল।
  • সারা বছর এই ফলের চাষ করা যায়।
  • এই ফলে ৯৩% পানি আছে এবং এই ফলকে কাঁচা ও খাওয়া যায়।
  • এই ফল চাষ পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ এবং কম খরচে লাভবান হওয়া যায়।
  • ওজনে বেশি হওয়ায় লাভবান হওয়া যায় তাই বাংলাদেশের কৃষকদের প্রথম পছন্দ।
  • এই ফল বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ।
  • পেপিনোমেলন ফল ছাদে বাগানবাড়ির আঙ্গিনায়ও লাগানো যায়।
  • ফসলের জীবন শেষ না হওয়া পর্যন্ত একই সাইজের এই ফল ধরতে থাকে।
  • এই ফল চাষ করে অনেকেই ফরমালিনমুক্ত ভিটামিনের অভাব পূরণ করে থাকছে।

পেপিনোমেলন ফলের উপকারিতা

দক্ষিণ আমেরিকার মহাদেশের এই ফল আমাদের দেশের নতুন চাষ করা হচ্ছে। এটি সর্বপ্রথম রংপুরের পায়রা বন্ধ উপজেলায় চাষ করা শুরু করে। ফলটি পাকলে বেশ সুন্দর লাগে দেখতে। তেমনি এর উপকারিতা ও রয়েছে প্রচুর।
এই ফল খেতে রসালো বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর। পেপিনোমেলন ফলে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন। এই ফলটি নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরের ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ হবে। চলুন তাহলে পেপিনোমেলন ফলের উপকারিতা জেনে নেয়া যাক:

ডায়াবেটিস রোগের জন্য:পেপিনোমেলন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিগ্লাইসিটিভ ,এনটিইনফ্লামেটরি ও এনটিঅক্সিডেটিভ। এই সকল ভিটামিন এর কারণে ডায়াবেটিসের অগ্রগতির প্রভাব হ্রাস করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে যে ফ্যান অলিক এসিড ও এসকরবিক এসিডের মডেলটিতে ডায়াবেটিসের জন্য ইতিবাচক ফলাফল রয়েছে। এটি যেভাবে ডায়াবেটিসের অগ্রগতিতে সহায়তা করে তেমনি দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ প্রতিরোধেয় কাজ করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:এই ফলের বিদ্যমান ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, ক্যান্সার জনিত কোষ গুলোকে সংক্রমনে বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই ফল এন্টি ইনফ্লামেটরি , ইমিউন মডুলেটরি এবং অ্যান্টি ক্যান্সার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা আমাদের শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধে বাধা দেয়।

কোলেস্টেরল কমানো:পেপিনোমেলন ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সামগ্রী থাকে যা কোলেস্টেরলের মাত্রার হ্রাস করে। এই ফাইবার শরীরের রক্ত প্রবাহের কম ঘনত্বের লাইপো প্রোটিন কোলেস্টেরল শোষণকে গ্রাস করতে পারে এবং উচ্চ ঘনত্বের লাইপো প্রোটিন হতে বাধা দেয়।

শরীরের শক্তি বৃদ্ধি:আমরা সবাই শরীরের শক্তি কোথা থেকে পাই? শরীরের বিভিন্ন সঞ্চিত গ্লুকোজ থেকে আমরা শক্তি পাই। এ সকল গ্লুকোজ আমাদের বিভিন্ন খাদ্য থেকে পেয়ে থাকি। এই ফলে কয়েকটি যৌগ রয়েছে যা গ্লুকোজের শক্তি ফাটলে ভেঙে দেয় এবং আপনি তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি বুস্টার পেয়ে থাকেন। সুতরাং পেপিনোমেলন ফল খেলে আপনার শরীরের ভালো শক্তি অনুভব করবেন।

ব্যথা দূর করা:পেপেনোমেলন ফলে এন্টি ইনফ্লামেটরি থাকায় এটি শরীর জুড়ে ব্যথা কমিয়ে তোলে। নিয়মিত ফলটি খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাথা থেকে মুক্তি পাবেন।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:যারা উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় ভুগেন তারা নিয়মিত পেপিনোমেলন ফল খেতে পারেন। এই ফলে থাকা পটাশিয়াম যা আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পটাশিয়াম লবণের প্রভাব গুলিতে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং রক্তচাপ কমিয়ে তোলে।

হজমে সাহায্য করা:পেপিনোমেলন ফলে রয়েছে ফাইবার যা আমাদের অন্তরে কষ্টকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে। এই ফল গ্যাস্টিক আলসার প্রশান্ত করার জন্য বিশেষভাবে কাজ করে।

যকৃতের স্বাস্থ্য রক্ষা:পেপিনোমেলন ফল লিভারের শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। লিভারের শক্তি বৃদ্ধি ওজন ভারসাম্য রক্ষা ও সকল স্বাস্থ্যের সুরক্ষা করার অন্যতম পেপিনোমেলন ফল। এই ফলে থাকা ফাইবার শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ গুলোকে সরিয়ে দেয় ও লিভার কে পরিষ্কার করে।

হার শক্ত করে:পেপিনোমেলন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। এই ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরের বিভিন্ন হাড়কে শক্তিশালী করে। সুতরাং পাপিনোম্যালন ফল খাওয়ার ফলে আমাদের দুর্বল হাড় গুলোতে ক্যালসিয়াম জমা হবে এবং আমাদের হাড় মজবুত হবে ‌‌।

সুতরাং বলা যায় যে পেপিনোমেলন ফল আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম রোগের সমস্যা ও নিরাময় বেশ সাহায্য করে। তাই এই বিদেশী ফল খাওয়া এবং চাষ করে নিজের দেশকে উন্নত করা এবং আর্থিকভাবে সফল হওয়া যাবে।

বাংলাদেশের নতুন ফল পেপিনোমেলন চাষ করে সফল চাষি তাইজুল ইসলাম

তাইজুল ইসলাম যশোরের চৌগাছা উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের বড় খানপুর গ্রামের সবজি চাষী। তিনি এই ফলের চাষ ইউটিউব দেখে শুরু করেছিলেন। তাইজুল ইসলাম জানান তিনি রংপুরের মিঠাপুর থেকে চারা নিয়ে কয়েক শতক জমিতে এই ফলের চাষ করেন।প্রায় ৩৩ শতাংশ জমিতে এই ফলের গাছ রোপন করা হয়। তিনি একেবারে অনভিজ্ঞ ছিলেন। যার কারনে ইউটিউব ছিল তার একমাত্র ভরসা।

তিনি আরো বলেন ইউটিউব দেখে চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা শুরু করেন। গাছ রুপন এর দুই মাসের মধ্যে প্রতিটি গাছে ফুল ও ফলে ভরে যায়। বর্তমান দিনে প্রায় পঞ্চাশ মন পেপিনোমেলন ফল হয়েছে। তাইজুল ইসলাম বলেন তখন এই অঞ্চলে এই ফল নতুন চাষ করা হয়েছে যার কারণে মানুষের কাছে অনেকটাই অপরিচিত।

কিন্তু আশেপাশে এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছি এক কেজি ফলের মূল্য প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তিনি প্রথমে এলাকায় প্রচারের জন্য কম দামে বিক্রি করেছিলেন। প্রচার হলে চারা বিক্রি করে বাড়তি আয় করবে এরকমটা তিনি জানিয়েছিলেন। এই ফল খেতে অনেকটা তরমুজের মতো আবার দেখতে।পেঁপের মত লাগে।

তাইজুল ইসলামের মতো আপনিও যদি একজন সফল পেপিলোমেলন ফলের চাষী হতে চান অবশ্যই এই ফলের চাষ শুরু করুন। কারণ বর্তমানে এই ফলের চাহিদা বেশ ভালোই।

লেখকের মন্তব্য

বিদেশি ফল পেপিনোমেলন অসংখ্য পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও ঔষধি গুনাগুন একটি ফল। বাংলাদেশে নতুন ফল পেপিনোমেলন চাষ করে বিভিন্ন জেলার অনেক চাষী সাফল্যবান হয়ে উঠছে। তাই আপনিও সাফল্য হতে চাইলে এখনি এই ফলের চাষ শুরু করুন। এবং আপনার আশেপাশে মানুষকে এই ফলের চাষে লাভবান হওয়ার গল্প জানাতে অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করুন। আরো অনেক বিষয়ে তথ্য পেতে www.twestinfo.com পেইজে চোখ রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টুইস্ট ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্টের উত্তর দেয়া হয়।

comment url