কোমর ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
শীতকালে ঠোঁট ফাটা রোধের উপায়
প্রিয় পাঠক, আজকের পোস্টে কোমর ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়, কোমর ব্যথা কমানোর
ঔষধ, কোমর ব্যথা কমাতে কি কি খেতে হবে,কোমর ব্যথা কমানোর ব্যায়াম ইত্যাদি
সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। এই সমস্যা ও সমস্যা থেকে মুক্ত পেতে সকল টিপস বিশ্লেষণ
করা হয়েছে।
যদি আপনি কোমর ব্যথার সমস্যায় ভুগেন তাহলে অবশ্যই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন।
অবশ্যই কোমর ব্যথা থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করবে। তাহলে দেরি না করে চলুন
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়া যাক।
সূচিপত্র
ভূমিকা
কোমর ব্যথা সকলের কাছে পরিচিত একটি রোগ। মেরুদন্ডে পিছনের দিকে শেষ অংশে ব্যাথা
হলে আমরা একে কোমরের ব্যথা হিসেবে চিহ্নিত করি। এই ব্যথার পেছনে কোন বড় রোগ থাকে
না। এটি হয় আবার এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়।
আরো পড়ুন:শীতে পা ফাটা রোধের উপায়
গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০% মানুষ কখনো না কখনো কোমর ব্যথা হয়।
তাছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক অধিকাংশ মানুষই স্থায়ী কোমর ব্যথায় ভুগেন। শোয়া বসায়
ভুলভঙ্গি, অতিরিক্ত নিচু হয়ে কাজ করা, দৈনন্দিন খাদ্যাভাসের ভুলের কারণেও কোমরে
ব্যথা হতে পারে।
কোমর ব্যথা কেন হয়
কোমর ব্যথা প্রায় অনেকেরই হয়ে থাকে। কিন্তু কোমর ব্যথা কেন হয় আমরা অনেকেই
জানি না। পিঠের মেরুদন্ডের নিচের দিকে উঠাবসা বা কোন কাজ করার সময় ব্যথা
অনুভূত হলে আমরা তাকে কোমর ব্যথা বলে থাকি। আমাদের এই পিঠের মেরুদন্ডে এর
হাড্ডি লিগামেন্ট এর সাহায্যে একটির সাথে আরেকটি যুক্ত থাকে।এই লিগামেন্ট হলো
সুতার মতো টিস্যু যা হারকে সংযুক্ত রাখে।
আমাদের উঠা বসা বা বেশিক্ষণ নিচু হয়ে কাজ করার ফলে লিগামেন্টের টান বা চাপ
লাগে যার ফলে আমাদের পিঠে বা কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়। তাছাড়া মেরুদন্ডের
প্রতিটি হাড়ের মাঝে একটি করে ডিক্সবাজ চাকতির মত থাকে যা সরে গেলে মেরুদন্ডের
স্থান চুত্য হয় এবং ব্যথা হয়।এর পাশাপাশি পায়ে ব্যথা, বোধ কমে যাওয়া ও
দুর্বলতার মতো লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে। কখনো কখনো কারণ ছাড়াই কোমরে ব্যথা
হয়। মানসিক চাপে থাকলেও কোমর ব্যথা বাড়তে পারে।
কোমর ব্যথা কিসের লক্ষণ
দীর্ঘ সময় কর্মস্থানে বসে থেকে কাজ করার ফলে কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকার কারণে কোমরে ব্যথা অনুভূত হয় এটা
যেমন সত্য তেমনি অত্যাধিক কোমরের ব্যথা হতে পারে মারাত্মক কোন রোগের লক্ষণ।
অনেকে আমরা মনে করি কিছুক্ষণ পর সেরে যাবে বা বসে থাকার কারণে এরকম হয়।
অত্যাধিক কোমর ব্যথা কিসের লক্ষণ এটা আমরা অনেকেই জানিনা। নিয়মিত কোমর ব্যথা
হতে পারে মারাত্মক কোন রোগের লক্ষণ। যেমন:
হাড়ের টিবি রোগ:হারের টিভি রোগ আমাদের অনেকের কাছে পরিচিত একটি রোগ। এই
রোগে হারের জয়েন্ট সহ মেরুদন্ড ব্যথা অনুভূত হয়। মেরুদন্ডের হিপ জয়েন্ট ও
কোমরের মাত্রা অতিরিক্ত ব্যথা অনুভূত হলে হারে টিবি রোগ শনাক্ত করা হয়।
সি সেকশন:মহিলাদের বাচ্চা প্রসবের সময় মেরুদন্ডে ইনজেকশন দিয়ে
অ্যানেসথেসিয়া করা হয়। যার কারনে মেরুদন্ডে ব্যথা অনুভূত হয়।
আরো পড়ুন:চোখের গঠন, বিভিন্ন অংশের কাজ ও রোগ
কিডনি সমস্যা:সাধারণত কিডনিতে পাথর হলে পিঠে বা পেটের তলদেশে ব্যথা
অনুভূত হয়। একই সাথে পিঠে, কোমরে এবং পেটের তলদেশে ব্যথা অনুভূত হলে অবশ্যই
ডাক্তার দেখাতে হবে।
ক্যান্সার: ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আগে পিঠে কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়। তাই
কোমরে ব্যথা হলে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।
পেলভিক পেইন:মুদ্রাসয় মূত্রথলি জরায়ু ডিম্বাণু ও পুরুষদের প্রোটেস্ট
গ্র্যান্ডে কোন জটিলতা দেখা দিলে তখন পিঠে ও কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়।
ভিটামিন ডি:শরীর সুস্থ রাখার জন্য আমাদের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন গ্রহণ
করতে হবে। তেমনি ভিটামিন ডি এর অভাব দেখা দিলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা
অনুভূত হয়। তেমনি পিঠের মেরুদন্ডে বা কোমরও ব্যথা অনুভূত হয়। ভিটামিন ডি এর
ঘাটতি পূরণ করতে রোদ ও বিভিন্ন ভিটামিনের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।
পেশির টান:অনেক সময় দাঁড়িয়ে থেকে আমরা ভারী জিনিস উঠানোর চেষ্টা করি।
তখন শরীরের বিভিন্ন জোড়ায় বা পেশীতে টান লাগে। তেমনি মেরুদন্ডের আশেপাশে বেশি
টান লাগার কারণে কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়। এরকম ব্যথা অনুভূত হলো অবশ্যই
ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তাছাড়া নরম বিছানায় শোয়ার কারণে ও কোমরে ব্যথা হতে পারে। নরম বিছানায়
শোয়ার কারণে শরীরে বিভিন্ন অংশে পেশীতে টান লাগে। দীর্ঘদিন নরম বিছানায়
শোয়ার ফলে কোমর ব্যথায় স্থায়ী রূপ ধারণ করতে পারে। আশা করি কোমর ব্যথা কিসের
লক্ষণ এই সম্পর্কে আপনারা কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন। আরো জানতে বাকি
পোস্টটুকু পড়ুন।
কোমর ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
কোমর ব্যথায় কমবেশি আমরা সবাই ভুগি। দিনের অধিকাংশ সময় বসে কাজ করার ফলে এরকম
ব্যথা হয়। অনেকে আমরা এই ব্যথা থেকে রেহাই পেতে ঔষধ না খেয়ে ঘরোয়া উপায়
খুঁজি। তাই কোমর ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে কিছু টিপস শেয়ার করবো।
- কোমর ব্যথা কমাতে নিয়মিত কোমরে গরম পানি ছ্যাক দিন। এতে করে ধীরে ধীরে কোমর ব্যথা একেবারেই সেরে যাবে।
- নারিকেল তেল ও কর্পূর একসাথে গরম করে এরপর কিছুটা ঠান্ডা হওয়ার পর কোমরে মালিশ করুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার মালিশ করতে পারেন।
- কোমর ব্যথা কমানোর একটি জাদুকারি তেল হল নীলগিরি তেল। ব্যথায় স্থানে এই তেলের মালিশ করলে নিমিষেই ব্যথা সেরে যায়।
- আদা ব্যথা সারানোর জন্য একটি উপকারী ঔষধ। আদা দিয়ে চা বানিয়ে নিয়মিত খাওয়ার ফলে ব্যথা কমে যাবে।
- সরিষার তেল ও রসুনের কুয়া একসাথে গরম করে কোমরে মালিশ করুন।
- পান পাতার সামান্য সরিষার তেল লাগিয়ে কিছুটা গরম করে নিন। এরপর কোমরে মালিশ করুন। পান পাতা ব্যথা সুশনে সাহায্য করে।
কোমর ব্যথা কমাতে কি কি খেতে হবে
কোমর ব্যথা সারাতে শুধু শরীরচর্চা করলেই হয় না, খাবারের দিকেও খেয়াল রাখতে
হয়। অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পুষ্টিহীনতার কারণেও কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়। কাজের
চাপের কারণে অনেক সময় বাহির থেকে খাবার খাওয়া হয়। ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত
তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার কারণে শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব দেখা দেয়। যার ফলে
কোমরে ব্যথা হয়। তাই কোমর ব্যথা কমাতে কি কি খেতে হবে জানতে নিচের টিপস পড়ুন।
আরো পড়ুন:অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয় কী
প্রোটিন যুক্ত খাবার:প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন দুধ ,ডিম, মুরগির মাংস,
ডাল ও বিভিন্ন ধরনের মাছ খেতে পারেন। এগুলো শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করবে।
প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন রোগ ও কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি
পাওয়া যাবে।
মূল যুক্ত শাকসবজি:মাটির নিচে জন্মায় এমন শাকসবজি কে আমরা মূলযুক্ত
শাকসবজি বলি। যেমন: আলু, মুলা, বিট, গাজর ইত্যাদি। এ সকল খাদ্যে প্রচুর পরিমাণ
এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যার শরীরের হারকে মজবুত করে।
সবুজ শাকসবজি:নিয়মিত খাবার তালিকায় সবুজ শাকসবজি রাখুন। যেমন পালং
শাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি ইত্যাদি। সবুজ শাকসবজিতে রয়েছে সালফুরাফেন নামক
যৌগ যা শরীরের ব্যথা মুক্ত করে। এছাড়া রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ভিটামিন
কে এর মত উপকারী উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার:নিয়মিত ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড খাওয়ার
ফলে কোমর ব্যথা সারানো সম্ভব। ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার হলো: বাদাম,
সামুদ্রিক মাছ, চিয়া সিড ইত্যাদি। এছাড়া রান্নার কাজে অলিভ অয়েল ও সরিষার
তেল ব্যবহার করতে পারেন।
আরো পড়ুন:বুকে ব্যথা হলে করণীয় কি?
সকল খাবার খাওয়ার ফলে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই আপনার শরীরে বিভিন্ন
রোগ ও কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। ঔষধ খাওয়া থেকে বাঁচতে চাইলে
উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলতে পারেন।
কোমর ব্যথা কমানোর ব্যায়াম
কোমর ব্যথা কমানোর ব্যায়াম সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। নিয়মিত কিছুটা সময়
ব্যায়াম করার মাধ্যমে ব্যয় করলে সহজে কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
চলুন তাহলে কিছু ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক:
সিদ্ধাসন:দুই পা ভাঁজ করে বসে চোখ বন্ধ করে ধ্যান মগ্ন থাকুন। শিরদাঁড়া
সোজা করে বসুন। কিছুক্ষণ এভাবেই বসে থাকুন ফলে দুই পায়ের পেশী নমনীয় হবে এবং
মেরুদন্ড সোজা হবে।
মুন পোজ:সোজা হয়ে চেয়ারের ওপর বসুন। বুক ভরে শ্বাস নিন। দুই হাত উপরে
তুলুন এবং ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। শাস ছাড়ার সময় অবশ্যই শীত দাঁড়ায় টানটান
অনুভূতি রাখুন। চাইলে মাথা একটু পেছনে নিয়ে উপরের দিকে তাকাতে পারেন।নিয়মিত
এই ব্যায়াম করার ফলে পিঠে ব্যথা কমে যাবে এবং গুজো হয়ে থাকার অভ্যাস থেকে
রেহাই পাবেন।
সিটেট ব্যাকবেন্ড পোজ:পা মাটিতে রেখে সোজা হয়ে চেয়ারে বসুন। শিরদাঁড়া
সোজা রেখে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ান। সামনের দিকে ঝুকুন। হাত সোজা করে চেয়ারের
পিছন দিকটা ধরুন। ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। ২০ সেকেন্ড ধরে রাখার পর শিরদাঁড়া সোজা
রেখেই চেয়ারে বসুন।
সিটেট ফিগার ফোর পোজ:মেঝেতে পা রেখে চেয়ারে শিরদাঁড়া সোজা করে বসুন।
শিরদাঁড়া সোজা রাখা অবস্থায় মাথাকে ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে ঘুরান। আবার
মাথাকে ঘড়ির কাটার দিকে ঘুরান। ডান পা মেঝেতে শক্ত রেখে বাম পা হাঁটুর উপরে
তুলুন। এবার বুক ভরে শ্বাস নিন। এই ব্যায়াম করার ফলে হিট কোমর ও হাঁটুর ব্যথা
থেকে রেহাই পাবেন।
ওয়াইড লেগ ফরওয়ার্ড ব্যান্ড:দুই পা ছড়িয়ে দাঁড়ান। হিপে হাত রেখে
ধীরে ধীরে একদিকে পা ভাঁজ করুন। এরপর পুরো শরীর টানটান করে মাটিতে হাত রাখুন।
এই ব্যায়াম করার ফলে হিপে হাতে ও কোমরের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথা নিরাময় হবে।
আরো পড়ুন:
কোমর ব্যথা কমানোর ব্যায়াম বিশেষ ভাবে আমাদের উপকার করে থাকে। নিয়মিত
ব্যায়াম করার মাধ্যমে আমরা চিরতরে কোমর ব্যথা থেকে রেহাই পেতে পারবো।
লেখকের মন্তব্য:
সঠিক নিয়মে জীবন যাপন করার মাধ্যমেও স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে উঠতে পারে।
স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন না হলে পরবর্তীতে স্বাস্থ্য ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে
পারে। তাই আমাদের উচিত নিয়মমতো জীবন যাপন করা। কোমর ব্যথা কমাতে ঘরোয়া উপায়
মেনে চলা।
উপরোক্ত পোস্ট টি স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য লিখা হয়েছে। কোন পদক্ষেপ নেওয়ার
পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। আশা করি আমার পোস্টে আপনাদের উপকারে
আসবে। লাইক শেয়ার ও কমেন্ট এর মাধ্যমে পাশে থাকবেন। আরো অনেক তথ্য পেতে
www.twestinfo.com পেজে চোখ রাখুন।
টুইস্ট ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্টের উত্তর দেয়া হয়।
comment url