পড়ালেখায় মনোযোগ বৃদ্ধির উপায়
চোখের গঠন,কাজ ও রোগ সম্পর্কে পড়ুন
আজকালকের বাচ্চাদের একটাই সমস্যা তাদের পড়ালেখায় মন বসে না। পড়ালেখায় মনোযোগ
বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে তাদের অভিভাবকদের সঠিক ধারণা নেই। তাই আজকের পোস্টে
পড়ালেখায় মনোযোগ বৃদ্ধির উপায়, পড়ালেখা ভালো লাগে না কেন ,মনোযোগ বৃদ্ধি
ইসলামিক উপায় ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই এরকম সমস্যা ও এই
সমস্যার সমাধান পেতে অবশ্যই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ুন।
সূচিপত্র:পড়ালেখায় মনোযোগ বৃদ্ধির উপায়
ভূমিকা
পড়ালেখার মনোযোগী না হলে ভালো রেজাল্ট করা যায় না। তাই পড়তে বসলেই নানান রকম
ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খায়। কতশত কথা ভাবনা, বারবার ফোন ধরার ইচ্ছা, নানান রাজ্যের
কথা ভাবতে ভাবতে সময় চলে যায় তখন আর কিছুই পড়া হয় না।
আরো পড়ুন:IELTS আইইএলটিএস পরীক্ষার ধরন ও খরচ
এভাবেই পরীক্ষার সময় চলে আসে আর সব সময় খারাপ রেজাল্ট হয়। আপনি যদি এমন
সমস্যায় ভুগেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। পোস্টটি পড়লে আপনার কাজে আসবে এবং
নিয়ম অনুযায়ী পড়ালেখা করলে ভবিষ্যতে ভালো রেজাল্ট হবে।
মনোযোগী হতে হলে কি করতে হবে
পড়ালেখায় মনোযোগ বৃদ্ধি করতে হলে প্রথমে আপনাকে স্থান নির্বাচন করতে হবে। স্থান
নির্বাচনের ক্ষেত্রে একেকজনের পছন্দ একেক রকম হয়ে থাকে। কেউ নিরিবিলি পরিবেশে
পড়াশোনা করতে পছন্দ করে আবার কেউ কোলাহল ময় পরিবেশেও পড়াশোনা করতে পারে।
আপনাকে নির্বাচন করতে হবে আপনি কোন পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পড়াশোনার স্থানে পর্যাপ্ত আলো বাতাস থাকা প্রয়োজন । পর্যাপ্ত
আলো বাতাস থাকার কারণে চোখের চাপ কম পড়বে এবং মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বেড়ে
যাবে। পড়াশোনা করার স্থান অবশ্যই গুছিয়ে রাখতে হবে কারণ অগোছালো পরিবেশে মন
অস্থির হয়ে যায় এবং পড়াশোনায় বিরক্ত অনুভূত হয়। পড়ার টেবিল সব সময় গুছিয়ে
রাখা।
পড়তে বসার আগে প্রয়োজনীয় সবকিছু সাথে নিয়ে বসা। এতে করে অনেকক্ষণ পড়ার ইচ্ছা
জাগে। অবশ্যই নির্দিষ্ট একটি স্থান বাছাই করা যেখানে সবসময় নিরিবিলি পরিবেশে
পড়াশোনা করা যাবে। খাওয়া-দাওয়ার জায়গা, আড্ডা দেওয়ার জায়গা ও ঘুমানোর
জায়গায় পড়তে না বসাই ভালো।
পড়ালেখা ভালো লাগে না কেন?
পড়ালেখা ভালো না লাগার অনেক কারণ রয়েছে। পড়ালেখা আমাদের স্বাধীনতায় বাধা হয়ে
দাঁড়ায়। তাই অনেকেই পড়ালেখার ওপর বিরক্ত হয়ে যায়। নিয়ম মত পড়ালেখা আমাদের
এক ধরনের বাধ্যবাধকতার মধ্যে নিয়ে আসে।
পাঠ্যপুস্তকের লেখাপড়া তো কোন গল্প রোমাঞ্চকর বিষয় নয় যে সবার ভালো লাগবে।
ছত্রাকালে আমরা সকলেই ভাবি এই পড়ালেখা কবে শেষ হবে।আবার শেষ হলে সবাই পড়ালেখা
মিস করে। দেখবেন পরীক্ষার আগে পড়তে কারো ভালো লাগে না কিন্তু পরীক্ষা শেষ হয়ে
গেলে সবাই পড়ালেখাকে মিস করে কারণ তখন না পড়লেও হবে।
নিয়ম মত পড়ালেখা করা, স্কুলের বা কলেজের পড়া শেষ করা বা বাবা-মার ভয়ে
পড়ালেখা করা এইসব ভাবনার কারণেও পড়ালেখা ভালো লাগে না। পড়ালেখা বিষয়ে এরকম
অস্বস্তিকর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করতে হবে। আনন্দের সাথে পড়ালেখা করতে হবে। নতুন
কিছু জানা ,নতুন কিছু শিখা মজাই আলাদা এরকম চিন্তা ভাবনা থাকতে হবে।
পড়ালেখায় মনোযোগ বৃদ্ধির উপায়
পড়ালেখা সকলের কাছে একটি বিরক্তকর বিষয়। অনেকেই এটিকে জোরপূর্বক কর্ম হিসেবে
মনে করেন। তাই প্রায় সময় আমাদের পড়ালেখা মনোযোগ বসে না। পড়ালেখায় মনোযোগ
বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে আজকে কিছু তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
আশা করি তথ্য অনুসারে চললে আপনাদেরও পড়ালেখায় মনোযোগ বৃদ্ধি উপায় সম্পর্কে
ধারণা হবে। চলুন তাহলে নিচে পড়ালেখা মনোযোগ বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে জানা যাক:
স্থান নির্বাচন করা: পড়ালেখা মনোযোগী হতে না পারার একটি অন্যতম কারণ হলো
ভুল স্থানে পড়তে বসা। তাই পড়ালেখায় মনোযোগী হতে হলে অবশ্যই সঠিক স্থান
নির্বাচন করতে হবে। খাওয়া-দাওয়ার জায়গা, আড্ডা দেওয়ার জায়গা,টিভি দেখার
জায়গা, ঘুমানোর জায়গা এরকম জায়গায় পড়তে বসা উচিত নয়। এ সকল জায়গায় পড়তে
বসলে অক্লান্তি বা অমনোযোগী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই নিরিবিলি, আলো বাতাস
পূর্ণ জায়গায় পড়তে বসাই উত্তম।
লক্ষ্য নির্ধারণ করা: আমাদের সকলের জীবনেরই কিছু না কিছু লক্ষ্য থাকে।
অল্প বয়সে আমরা অনেক লক্ষ্য নির্ধারণ করে থাকি যা বাস্তবসম্মত হয় না। যার কারনে
জীবনের মাঝ রাস্তায় এসে লক্ষ্য বিচ্যুতি হয়। সকলের বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ
করা উত্তম। লক্ষ্য অনুযায়ী সময় ও দিন ভাগ করে নিয়ে রুটিন তৈরি করা। এতে করে
আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।
বিরতি নিয়ে পড়ুন: অনেক সময় আমরা একটানা অনেকক্ষণ পড়তে থাকি। যার কারনে
পিছনের পড়া অনেকটাই ভুলে যায়। তাই সকলের উচিত একটানা পড়ার চেয়ে মাঝে মাঝে
বিরতি দেওয়া। যেমন আপনি ৩০ মিনিট পড়ার পর পাঁচ থেকে দশ মিনিট বিরতি নিতে পারেন।
এতে করে আপনার মস্তিষ্ক কিছুটা বিরতি পাবে এবং পিছনের সকল পড়া মনে রাখতে সাহায্য
করবে। বিরতি নেওয়ার কারণে পড়ালেখার উপর বিরক্তির ভাবটা কম আসবে। ৩০ মিনিট পর পর
চারবার করে বিরতি নিবেন। এরপর একটি লম্বা বিরতি নিয়ে ঘুমানো খাওয়া-দাওয়া বা
অন্য কাজ করতে পারেন। এটি পড়ালেখা মনোযোগ বৃদ্ধিতে অনেকটাই সাহায্য করে।
পড়ার বিষয় নির্ধারণ করা: পড়তে বসার আগে অবশ্যই আপনাকে বিষয় নির্ধারণ
করতে হবে। কোনটা আগে এবং কোনটা পরে পড়বেন সেটি নির্বাচন আগেই করে নিবেন। এটি
নির্বাচন করতে না পারলে আপনার লক্ষ্যের দিকে ফোকাস করবেন।
তাছাড়া স্কুলের হোমওয়ার্ক আগে শেষ করতে পারেন। কখন কোন সাবজেক্ট পড়বেন তা
ক্যালেন্ডার বা খাতায় নোট করে রাখতে পারেন।
ফোন থেকে বিরত থাকা: আজকালকার বাচ্চাদের প্রধান শত্রু হলো ফোন। ফোনে
বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের নোটিফিকেশন বন্ধু-বান্ধবদের মেসেজ এসব পড়ালেখা মনোযোগী
হতে বাধা দেয়। দেখা যায় কিছুক্ষণ পড়ার পর একটু ফোন ধরার কথা বলে অনেকক্ষণ ফোন
নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়।
এতে করে বুঝাই যায় না কখন সময় পার হয়ে গেল আর পড়া কিছুই হলো না। ফোন নিয়ে
ব্যস্ত থাকার এই সময়টুকু কেউ পড়ার পিছনে ব্যয় করতে চায় না। তাই সকলের উচিত
পড়ার সময় নিজের ইচ্ছাতেই ফোন থেকে দূরে থাকা।
নিজেকে পুরস্কৃত করার মাধ্যমে: লক্ষ্য অনুযায়ী পড়ার পর নিজেকে কিছু না
কিছু দিয়ে পুরস্কৃত করুন। এতে করে পড়ালেখার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। পুরস্কার বড়
কিছু হতে হবে এমনটাও নয় ছোট ছোট পুরস্কারের মাধ্যমেও অনেক আনন্দ পাওয়া যায়।
প্রিয় সিরিজ ,বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘুরতে যাওয়া, প্রিয় খাবার খাওয়া এ সকল
কাজের মাধ্যমেও নিজেকে পুরস্কৃত করা যায়। পুরস্কৃত করার মাধ্যমে মনে পড়ার আনন্দ
চলে আসে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে অবশ্যই পড়ালেখা মনোযোগ বৃদ্ধি করা যাবে। আমাদের
সকলেরই উচিত পড়ালেখা একটি নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা। তাহলে জীবনের লক্ষ্যে
পৌঁছাতে আর কোন বাঁধা আসবেনা।
মনোযোগ বৃদ্ধির ইসলামিক উপায়
আমাদের মধ্যে সকলের মনে রাখার শক্তি একই রকম নয়। কেউ কম মনে রাখতে পারে কেউ
বেশি।মনোযোগ বৃদ্ধির ইসলামিক উপায় সম্পর্কে আমাদের তেমন কারো জানা
নেই।মনোযোগ বৃদ্ধির ইসলামিক উপায় সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে অনেক বাণী উল্লেখ
করেছেন।
মহান আল্লাহ তা'আলা কিছু দোয়া ও আমল করার কথা বলেছেন। যা করলে আমাদের স্মরণ
শক্তি বৃদ্ধি পাবে। নিজে চমৎকার কিছু দোয়া ও আমল উল্লেখ করা হলো যা করলে
স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়:
স্মরণশক্তি বৃদ্ধির দোয়া আরবি
উচ্চারণ:-সুবাহানাকা লা ইলমা লানা ইল্লামা আল্লামতানা ইন্নাকা আনতাল
আলিমূল হাকিম।
অর্থ:-হে আল্লাহ আপনি পবিত্র। আমরা কোন কিছু জানি না, তবে আপনি আমাদেরকে যা
শিখিয়েছেন সেগুলো ব্যতীত নিশ্চয়ই আপনি প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন ,হেকমতওয়ালা।
দোয়া ও জিকির করা:
আল্লাহ ছাড়া আমরা কোন কাজে সফলতা অর্জন করতে পারব না ।তাই আমাদের সবসময় আল্লাহ
তায়ালার কাছে দোয়া ও জিকির করতে হবে ।যাতে মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদের
স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে।
নিজের দোয়াটি পড়ে আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে জিকির করতে পারব এবং এই দোয়া পড়ে
জিকির করার মাধ্যমে আমাদের স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পাবে।স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পেলে
আমাদের পড়ালেখায় মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে।
দোয়া আরবি
উচ্চারণ:-রাব্বি জিদনি ইলমা
অর্থ:-হে আমার প্রতিপালক। আমার স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করুন।
পড়ালেখা মনোযোগ বৃদ্ধির মেডিটেশন
শরীরের সুস্থতার পাশাপাশি মনেরও সুস্থতার প্রয়োজন রয়েছে। তাই মনকে সুস্থ করার
জন্য প্রয়োজন মেডিটেশন। মেডিটেশনের মাধ্যমে আমাদের স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং
মস্তিষ্ক থেকে অপ্রয়োজনীয় সবকিছু আলাদা করে নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে ভাবতে
সাহায্য করে।
চিকিৎসকদের মতে নিয়মিত মেডিটেশন করার ফলে অনেকটাই দুশ্চিন্তা কমে যায়।
পড়ালেখার পাশাপাশি দৈনিক ১০ থেকে ২০ মিনিট মেডিটেশন করা প্রয়োজন।
মেডিটেশন করার ফলাফল:
১.মেডিটেশন করার ফলে আমাদের আইকিউ লেভেল বেড়ে যায়। তাছাড়া নিয়মিত মেডিটেশনের
মাধ্যমে স্মরণ শক্তি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা অপ্রয়োজনীয় চিন্তা ভাবনা কমে যায়।
২. প্রায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই পড়াশোনার চাপে থাকে। প্রতিদিন স্কুল-কলেজ শেষে
বাসায় ক্লান্ত অনুভব করে। মেডিটেশন করার ফলে ক্লান্ত অনুভূত হয় না।
প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট মেডিটেশন করতে হবে। উক্ত মেডিটেশন মস্তিষ্কের আলফা
ওয়েভের এক ধরনের গ্রন্থি নিঃসৃত হয় যার ফলে রাগ ,বিরক্তবোধ কমে যায়।
৩. পড়াশোনায় মনোযোগ না থাকলে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকলেও কোনো কাজ হয় না ।
তাই পড়তে বসার আগে বা পড়ার মাঝখানে কিছুটা সময় মেডিটেশন করতে হবে।
৪. দুই থেকে তিন মাস নিয়মিত মেডিটেশন করার ফলে মস্তিষ্কে উচ্চ রক্তচাপ জনিত
সমস্যা কমে যায়। যার কারনে দুশ্চিন্তার রাগ বিষন্নতার মত অনুভূতি কমে যায়। যার
ফলে মনোযোগের সাথে পড়াশোনা বা অন্যান্য কাজ করা যায়।
৫. বিশেষজ্ঞদের মতে নিয়মিত মেডিটেশন করার ফলে শরীরে প্রচুর পরিমাণ এর অ্যান্টি
বডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে করে অসুস্থ হওয়ার শঙ্কা কমে যায়।
৬. আমাদের মধ্যে অনেকেরই বাজে অভ্যাস রয়েছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ জেনেও
অভ্যাসটি ত্যাগ করতে পারি না। নিয়মিত মেডিটেশন করার ফলে এইরকম বাজে অভ্যাস চেঞ্জ
হয়ে যেতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার জন্য পড়ালেখার প্রয়োজন অপরিসীম। পাশাপাশি পড়ালখায়
মনোযোগ বৃদ্ধি করতে না পারলে পড়ালেখায় তেমন ভালো করতে পারবেন না। পড়ালেখায়
মনোযোগ বৃদ্ধি করতে উপরের প্রক্রিয়াগুলো ফলো করুন আশা করি আপনাদের কাজে আসবে।
আরো অনেক তথ্য পেতে www.twestinfo.com পেজে চোখ রাখুন।
টুইস্ট ইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্টের উত্তর দেয়া হয়।
comment url